নাটোর অফিস॥ শ্বাসুড়ি ও জামাইয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামের মাতবররা এক গৃহবধূকে স্বামীর সংসার ছাড়ার ফতোয়া দিয়ে একঘরে করে রেখেছে। দুই দিন একঘরে অবস্থায় থাকা পরিবারটির তিন সদস্যকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফতোয়াবাজ মাতবরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। মামলার পর থেকেই আসামীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
আজ সোমবার(১৫ই জুন) দুপুরে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধু। মামলায় গ্রাম্য মাতব্বর ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গত ৮ই জুন রাতে ভুক্তভোগী গৃহবধুর স্বামী তার শ্বাশুড়িকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রানীনগর মোল্লাপাড়া পৌছালে একদল যুবক তাদের পথরোধ করে পরিচয় জানতে চায়। জ্বামাই-শ্বাশুড়ির পরিচয় জানতে পেরে তারা দুজনের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেয়ায় গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন চালায় এবং এলাকার লোকজনদের ডেকে জড়ো করে। ঘটনার চারদিন পর গত ১৩ই জুন শনিবার দেবোত্তর গরিলা গ্রাম্য মাতব্বর ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদ চত্বরে শ্বাশুড়ি-জামাইয়ের বিচার বসান। বিচারে শ্বাশুড়ি-জামাইকে উপস্থিত রেখে তাদের বিরুদ্ধে শরীয়ত পরিপন্থী অপরাধের অভিযোগ এনে জোরপূর্বক তওবা পড়ানো হয়। এসময় মাতবররা সিদ্ধান্ত দেন যেহেতু স্বামী তওবা পড়েছেন, সেহেতু তিনি ওই গৃহবধুর স্বামী হিসেবে আর থাকতে পারবেন না। গৃহবধুকে স্বামীর ঘর ছেড়ে সন্তানসহ মায়ের বাড়িতে অবস্থান নিতে হবে। ওই রাত থেকেই মা মেয়েকে একঘরে করে রাখা হয়। আজ সোমবার (১৫জুন) ঘটনাটি জানতে পেরে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ মা, মেয়ে ও সন্তানদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ভুক্তভোগী গৃহবধু ও তার স্বামী জানান, ফতোয়া দিয়ে তাদের সংসার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সামাজিকভাবে তারা হেয় হয়েছেন। মাতবররা আইনের আশ্রয় না নিতে হুমকিও দিয়েছেন।
নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা বলেন, সামাজিক বিচারের নামে ফতোয়া দেয়ার বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের সহযোগিতায় একঘরে পরিবারটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ফতোয়াবাজ মাতবরদের ধরতে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।