নর্থ বেঙ্গল চিনিকল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১শে জানুয়ারী ও ১ লা ফেব্রুয়ারী দুইটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেন চিনিকলের পুরাকৌশল বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু সালেহ। বিজ্ঞপ্তিতে চিনিকলের নিরাপত্তা অফিস হতে সাধারণ ভান্ডার পর্যণ্ত রাস্তা, স্পেস মাট ইয়ার্ড হতে স্প্রে পন্ড মটর পর্যন্ত রাস্তা, মিল মন্দিরের রাস্তা, অফিস কলোনীর এপ্রোচ রাস্তার বিটুমিন কার্পের্টিং, কারখানার অভ্যন্তরের রাস্তা আরসিসিকরণ, ইক্ষু হিসাব ও নির্মাণ শাখার অফিস মেরামত, ব্যাগিং হাউস ও ইন্টারমিডিয়ের গোডাউন সিসিঢালাই, ব্যাগাস ইয়ার্ড উন্নয়নকরণ, স্প্রে পন্ড মোটরের ঘর সংস্কার ও বড়াল খামারের গয়লার ঘোপ এলাকার একটি রাস্তা এইচবিবিকরণ কাজগুলোর সাতটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ৫০০টাকা মূল্যের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৭০ লাখ টাকা।
অংশগ্রহনকারী ঠিকাদারের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এই অনিয়ম করা হয়েছে। ভাগ-বাটোয়ারার কার্যাদেশ বাতিল করে প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত করার দাবী জানিয়েছেন তারা।
টেন্ডারে অংশগ্রহনকারী বৈশাখী এন্টারপ্রাাইজের সত্বাধিকারী শান্ত হোসেন বলেন, “টেন্ডার কবে হয়েছে তা জানতেই পারিনি। হঠাৎ শুনি কাজ ভাগাভাগি হয় গেছে। যারা দরপত্র কিনেছিলেন তাদের অনেকেই জানতে না কবে টেন্ডার হয়েছে। একটি তারিখে টেন্ডারের লটারী অনুষ্ঠিত দেখিয়ে অংশগ্রহনকারী অনেকের উপস্থিতির স্বাক্ষর নিতে শুনেছি।”
এ কে এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, “টেন্ডারের দিন আমি উপস্থিত ছিলাম, এই মর্মে মিল কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকদিন ধরে আমার স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। বৃহষ্পতিবার দুপুরে তাদের আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছি। স্বাক্ষর নিতে এসে একজন জনপ্রতিনিধির ফোন ধরিয়ে দেয় আমাকে, তাই স্বাক্ষর না দিয়ে উপায় ছিলো না।”
ন্যাশনাল কনসাল্টেন্সির সত্বাধিকারী খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেন, “ট্রেন্ডার কবে হয়েছে জানতে পারিনি। শুধু জেনেছি কাজ ভাগ হয়ে গেছে। মিল কর্তৃপক্ষ টেন্ডারে উপস্থিতির স্বাক্ষর নিতে দরপত্রে অংশগ্রহনকারীদের বাড়ি বাড়ি ধর্ণা দিচ্ছে এখন।”
চিনিকল সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, “সদ্যসাবেক এমডি আব্দুল কাদের নিয়ম বহির্ভুতভাবে সর্বশেষ টেন্ডার প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেন। তিনি শ্রমিকদের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে চিনিকলটি ব্যবহার করে গেছেন। গত মৌসুমেও তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিলো। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেও গেছে কর্পোরেশন প্রতিনিধিরা।”
লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী বলেন, “সাবেক এমডি আব্দুল কাদেরকে যারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে সমর্থন দিতেন, যারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থক সেসব অনুগতদেরই এই টেন্ডারের কার্যাদেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি ইচ্চাকৃতভাবে টেন্ডারে বিলম্ব করেছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি সদ্য অবসরগ্রহণ করেছেন বলে অনিয়মের দায় থেকে যেনো মুক্তি না পান সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণে কর্পোরেশনকে অনুরোধ করছি। ”
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আব্দুল কাদেরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
চিনিকলের প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, “তিন মাস আগের টেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন তোলার মধ্যে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। এতোদিন কেউ কোন অভিযোগ করেনি। টেন্ডার আহবান থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ম মাফিক হয়েছে। লটারীর মাধ্যমেই নিম্নদরদাতারা নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ১৫ জন ঠিকাদারের উপস্থিতিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যরা লটারী করার সময় উপস্থিত ছিলেন না। কাজ ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(জিএম) হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি দুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে উপস্থিতির প্রমাণস্বরুপ স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে কি না, তা জানা নেই। এখনও কেউ এমন অভিযোগ করেনি। চিনিকলটি লাভজনক করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে। কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি সাড়া দেননি।