নাটোর অফিস॥
চলবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় এবার বোরো ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে চলনবিলের ৮০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টি ছাড়া অনান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় মাঠের ধান গোলায় তুলছে কৃষক।
তবে গোলা পর্যন্ত ধান নিতে প্রকট পরিবহন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে কৃষক। লকডাউনে সিংড়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ভ্যান চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ধান পরিবহনে ভ্যান পাওয়া যাচ্ছে কম। এতে ঘরে ধান তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। মাঠ থেকে তুলে রাস্তার পাশে ধান কেটে দীর্ঘ সময় রাখতে হচ্ছে কৃষকদের। এই অবস্থায় কৃষকের গোলায় ধান তুলে দিতে কদর বেড়েছে ঘোড়া ও মহিষের গাড়ির।
আজ রোববার(১০ই মে) উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ-বারুহাঁস আঞ্চলিক সড়কে ঘোড়ায় চপে ধান নিতে দেখা যায় কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ায় ৩৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বিপুল পরিমাণ এই ধান কাটতে জেলা ও জেলার বাইরে মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। ধান কাটার জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসন ধান কাটার শ্রমিকের ব্যবস্থা করে। এতে সময়মতো দান কাটার দুশ্চিন্তা দুর হয়। তবে এসব ধান কাটার পর ঘরে তোরা নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাটা ধান পরিবহন খুবই ভারী কাজ হওয়ায় মাঠ থেকে গোলা পর্যন্ত পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া চাইছে চালকরা। একই পরিমাণ ভাড়ায় বেশি পরিমাণ ধান পরিবহনের সুযোগ থাকায় এক্ষেত্রে কৃষকের ভরসা মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ির উপর।
স্থাপনদিঘী গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার দুশ্চিন্তা এখন নেই। তবে ধান ঘরে তুলতে ভ্যানপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। না দিয়ে এখন উপায়ও নেই।’
জলারবাতা গ্রামের কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, ‘শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে দেরী হওয়ায় বর্ষার পানিতে আমার ধান ডুবেছে। দ্রুত ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। কিছু ধান মহিষের গাড়িতে তুলে বাড়ি নিয়ে গেছি। ভ্যানের চেয়ে বেশি ধান মহিষের গাড়িতে তোলা যায়।’
ইটালি ইউনিয়নের কৃষক মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘ভ্যানে ধান পারাপারের খ্যাপ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এই টাকায় মহিষের গাড়িতে ভ্যানের চেয়ে বেশি ধান নেয়া যায়।’
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এবছর সিংড়ায় শ্রমিক সংকট নেই। তবে ধান পরিবহনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে। কৃষি বিভাগ ধানের ভালো ফলনের ব্যাপারে কৃষকদের বরাবরই পরামর্শসহ সহযোগিতা করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ঘরভর্তি বোরো ধান তুলবে কৃষক।