নাটোর অফিস॥
৯৯৯সহ সরকারি বিভিন্ন পরিসেবার নাম্বারে ফোন করে বলা হয় ‘আমি করোনায় আক্রান্ত- আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি,-আমাকে বাঁচান। শুধু একবার নয়, বিভিন্ন জরুরি সেবার নাম্বারে ৪৭৩ বার ফোন করে এই কথা বলা হয়। অবশেষে নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকার আব্দুল করিম পরিচয়দানকারী করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে খুঁজতে মাঠে নামে পুলিশ।
করোনামুক্ত নাটোরের জন্য বড় দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দেয়ার পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে তাদের সকল প্রক্রিয়া কাজে লাগায়। কিন্তু তার কোন হদিস করতে পারে না পুলিশ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দলের সহায়তায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলও মাঠে নামেন। কিন্তু সোমবার দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধান করেও ফোনকারী সেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে খুঁজে পান নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতের নেতৃত্বদানকারী পুলিশের একটি দল। পুলিশের ওই দলটি সোমবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের টলটলিয়া পড়া থেকে মোবাইলসহ সেই ফোনকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়।
তবে তাকে আটকের পর সবার চোখ কপালে উঠে যায়। আটক সুমন ১৩/১৪ বছর বয়সের এক কিশোর। সে ওই গ্রামের নবীনুরের ছেলে। স্থানীয় একটি স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন হট নম্বরে কল দিয়ে তার নাম বলে আব্দুল করিম। শহরের আলাইপুর এলাকায় তার বাড়ি। করেনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। এমন ফোন পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে জেলা পুলিশ। এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে করোনামুক্ত নাটোরের মানুষ মাঝে দেখা দেয় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। বিভিন্নস্থান থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এভাবেই পার হয় কয়েক ঘণ্টা। রাত ৮টার দিকে তাকে আটকের পর প্রশাসনে স্বস্তি ফিরে আসে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় যে, ওই ফোনটি ছিল প্রতারণা বা হয়রানিমূলক। সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্র নিছক মজা করার জন্যই সরকারের বিভিন্ন পরিসেবা নম্বরে ফোন করে।
নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, আটক ছেলেটির মোবাইল সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায় ৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সে সরকারি টোল ফ্রি ৩৩৩ নম্বরে ৩১৬ বার, ১৬২৬৩ নম্বরে ৬৩ বার, ১০৬৫৫ নম্বরে ৪০ বার, ১০৯ নম্বরে ৩১ বার এবং ৯৯৯ এ ২৩ বার কল করে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করেছে। এমন কাজের ফলে সরকারি সম্পদ ও সময় যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি ভুক্তভোগী জনগণ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছেন। পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ প্রশাসনসহ দায়িত্বরত অন্যন্য সংস্থা হয়রানির শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে আটক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছে, আপনাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন তারা যেন মোবাইলের অপব্যবহার করে এমন বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রদান না করে।