নাটোর অফিস॥
করোনাকালে তৃণমূল প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে এমন বাধ্যবাধকতা মানছেন না নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বেশ কিছু সরকারী দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। হালকা অসুস্থতার অজুহাতে অনেকেই বন্ধ করেছেন অফিসে আসা। এতে ত্রাণ ও সরকারী সহায়তা বিতরণে ট্যাগ অফিসারদের (সহযোগি কর্মকর্তা) সংকট তৈরী হয়েছে। এমন সংখট উত্তোরণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। এতে নানা ধারণের অনিয়মের সুযোগ তৈরীর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে ছুটি কাটাচ্ছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মজনু মিয়া। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ আলী মণ্ডল অবস্থান করছেন রাজশাহীতে নিজের বাসায়।
বাধ্যবাধকতা থাকলেও কেন কর্মস্থলে উপস্থিত নেই এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ আলী মন্ডল জানান, তিনি জ্বর-সর্দি -কাশিতে আক্রান্ত। বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের নির্দেশে বাড়িতে বিশ্রামে আছেন। চিকিৎসক ১৪ দিন বাসায় থাকতে বলেছেন। আজ রোববার ১৩ দিন পূর্ণ হয়েছে। দুদিন পর তিনি বের হবেন।
আলী আশরাফ মন্ডলের অসুস্থতার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার নাজমুস সাকিব বলেন, আশরাফ আলী মন্ডল কোন চিকিৎসা সেবা নেননি। তাকে ১৪দিন বাসায় থাকতেও বলা হয়নি।
আরেক অনুপস্থিত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মজনু মিয়া জানান, তার এজমার সমস্যা রয়েছে। তাই কর্মস্থল ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে অনলাইনে দাপ্তরিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
উল্লেখযোগ্য কি কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি বৈশাখী ভাতার একটি অংশ শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি ইউনিয়নে আলাদা আলাদা শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে অফিস সহকারীর মাধ্যমে তা সরকারি ফান্ডে জমা করা নিশ্চিতে তদারকি করছি।
এদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন কর্মস্থলে ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সেবা গ্রহীতা।
রতন কুমার সাহা বলেন, বিধি অনুযায়ী ২৪ঘণ্টা কর্মস্থলে থাকার নিয়ম রয়েছে। বর্তমানে চলমান সংকটে টানা পনের দিন কর্মস্থলেই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার থেকে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত নন। শিঘ্রই তিনি কার্যালয়ে বসে াপিস শুরু করবেন।
দপ্তর প্রধানদের অনুপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তার মধ্যে একজনও আমাকে জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেননি। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করাটা কর্তব্যের প্রতি অবহেলা। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা সর্বদা যোগাযোগ করছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বর্তমান সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা যে কোন সরকারী কর্মকর্তার নৈতিক দায়িত্ব। এই সংকটকালে জনপ্রতিনিধি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মী সহ আমরা সকলেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোনো কর্মকর্তা কর্মস্থলে না থাকাটা নৈতিকতা বিরোধী। সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে অনুপস্থিতির কারণ খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি।