মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া, নাটোর॥
গমের দানা সরু হওয়ায় প্রত্যাশিত ফলন হয়নি। যা ফলন, তা বিক্রি করে সরু দানার এই গম কাটার খরচ
তোলা সম্ভব নয় মনে করে পাকা গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কৃষকরা। গত কয়েকদিনে উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকার বেশ কিছু কৃষক তাদের গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন। এছাড়া উপজেলার জিগরী, যোগিপাড়া, মহজমপুর, ডাকরমারিয়া, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়, মাধোববাড়িয়া, কালিকাপুর, রহিমানপুর ও দেবনগর গ্রামসহ বেশ কিছু গ্রামের কৃষকরা জমিতেই পুড়িয়ে দিচ্ছেন গম।
তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, মৌসুমের শেষে দিকে যেসব কৃষক দেরিতে গম বীজ বপন করেছিলেন, শুধু তাদের ফলনই কম হতে পারে। এছাড়া এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে।
জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জমি চাষ করে গম বীজ বপন করেছিলেন কৃষকরা। নিয়মিত সার, সেচ ও পরিচর্যায় সবুজে ছেয়ে গিয়েছিলো ফসলের মাঠ। কিন্তু গম যখন শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন কৃষকরা দেখতে পান গমের দানাগুলো প্রত্যাশিত আকারে হয়নি। এতে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে অর্ধেকেরও কম। বিঘা প্রতি গড় ফলন হয়েছে দেড় থেকে তিন মণ। এই পরিমাণ গমের বাজার মূল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আর গম কেটে মাড়াইয়ের পর ঘরে তুলতেও খরচ লাগছে দুই হাজার টাকা। আর গমের বীজ বপন থেকে কাটার পূর্ব পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, হঠাৎ গমের দানায় লক্ষ্য করা হয়, পুষ্ট অবস্থায় বেড়ে না উঠে দুইপাশ চেপে তা সরু হচ্ছে। বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর বিক্রি করে কাটার শ্রমিকের মজুরিই তোলা সম্ভব নয়, লাভ তো দূরের কথা। তাই পাকা গম না কেটে পুড়িয়ে ফেলতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
সাইলকোনা গ্রামের আলাউদ্দিন, সেলিম রেজা এবং ভাটুপাড়া গ্রামের ছাকাত আলী জানান, তারা জমির পাকা গম গাছ আগুনে পুড়িয়েছেন।
বাজিতপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিন, বিরাজ মোল্লা, কাঁকফো গ্রামের আবুল কালাম, কোয়ালিগাড়া গ্রামের সাদেক আলী জানান, শীষ নিয়ে দাঁড়ানোর সময় তারা লক্ষ্য করেন গমের দানাগুলো সরু হচ্ছে। এতে গাছ নুইয়ে ভেঙ্গে পড়ে শীষসহ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই সমস্যার প্রতিকারে কীটনাশক স্প্রে করেও কোন কাজে হয়নি।
মাধোববাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম বীজ বপন করেছিলাম। বপন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গমের দানা না হওয়ায় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলেছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, প্রতিটি ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে সেই সময়ের পরে চাষ করলে সেই ফসল হয়না। যেসব চাষীরা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়েও অনেক দেরিতে বীজ বপন করেছেন তাদের গমের ফলন ভালো হয়নি। এছাড়া চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে।