নাটোর অফিসঃ
নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সারাদেশের ন্যায় নাটোরের সিংড়াতেও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির শুরু হয়েছিল। শুরুর দুদিনের মাথায় চাল বিক্রিতে নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। পরপর দুই দিন সুকাশ ইউনিয়ন থেকে ৬১ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে প্রশাসন। নায্যমূল্যের এসব চাল ডিলারদের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের মধ্যস্থতায় বিক্রি জন্য যাচ্ছিলো পাশ্ববর্তী জেলায়। এসব ঘটনায় জড়িত থাকায় দুই দিনে স্থানীয় ইউপি সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, চাল ডিলার, ক্রেতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার, কারাদন্ড ও লাইসেন্স বাতিলসহ খাদ্য সহায়তার সকল কর্মসুচি বাতিল করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৭ই এপ্রিল স্থানীয় ক্লাবে ১৩ বস্তা চাল মজুদ ও বগুড়ায় বিক্রির সময় সুকাশ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাজার থেকে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন শাহ, চাল ডিলার লুৎফর রহমান ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৈডালা বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন একই ইউনিয়নের শারুপাড়া গ্রাম থেকে আরও ৪৮ বস্তা চালসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ডিলার আওয়াল হোসেন স্বপন এবং চাল ক্রেতা রহমত আলীকে আটক করে এক মাসের দন্ডাদেশ দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া তার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।
যারা এখনও সরকারী খাদ্য সহায়তা পাননি ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি শুরু হওয়ার কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন তারা। আজ থেকে চাল বিক্রি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। সপ্তাহে রবি, মঙ্গল ও বৃহষ্পতিবার চাল বিক্রির দিন নির্ধারিত হলেও আজ অনেকেই চাল নিতে এসে ফিরে গেছেন। এছাড়া সিংড়ার বেশ কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও পৌছেনি খাদ্য সহায়তা।
ইতালি ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের জেহের আলী ও ছাতারদিঘী ইউনিয়নের সর্য্য বেওয়া জানান, নিজেদের যা আছে, তা-ই একটু একটু করে খেয়ে দিনযাপন করছেন। এখন পর্যন্ত কোন খাদ্য সহায়তা পাননি।
রিকশা চালক বছের আলী বলেন, মানুষ কম, ভাড়া নাই। চাল বিক্রিও বন্ধ। নেতারা নিজেরাই চাল লুট করে। নেতাদের বাদ রেখে চাল দিলেই গরীবরা চাল পাবে।
হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের আঁচলকোট গ্রামের আনেছা বেগম বলেন, যারা খাবার দেন তারা পাড়ার উপর এসেই দিয়ে চলে যান। গ্রামের ভেতর আসেন না। তাদেরও পাইনা, খাবারও পাইনা।
খাদ্য সুবিধাভোগী বাছাইয়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট এলাকার মানুষকে বঞ্চিত করে চাল আত্নসাৎ প্রবণতা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চামারী ইউপি চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা ও সুকাশ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী বাতিল হওয়ার পর নতুন করে দুই ইউনিয়নে সাড়ে তিন হাজার মানুষের তালিকা করার কাজ শুরু হবে।
সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, পৌর এলাকায় শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে চাল বিক্রি ও সহায়তা কর্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিলো। এখনো কোনো পরিবারের প্রয়োজন হলে আমি নিজে খাবার পৌছে দিচ্ছি এবং দেবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ডিলাররা যাতে কোনো রকমের কারসাজি করতে না পারে এবং প্রকৃত গরীবরা যেনো এবার সহায়তা পায় সেদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই নতুন তালিকা প্রস্তত করতে কিছুটা সময় লাগছে।