নাইমুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
র্যাপিড টেস্টিং কিটস দ্বারা করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক ধাপ এন্টিবডি স্কিনিংয়ের(আইজিজি ও আইজিএম) জন্য প্রস্তত নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখন অপেক্ষা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইইডিসিআর’র অনুষ্ঠানিক অনুমতি। আজ আইইডিসিআর বরাবর নিজেদের সক্ষমতা উল্লেখপূর্বক আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। অনুমতি মিললেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো জেলার উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পরীক্ষা। এতে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পর্যায় থেকেই সনাক্ত হবে ৬০ ভাগ করোনা রোগী। চাপ কমবে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোর নির্ধারিত ল্যাবগুলোর পলিমার চেইন রিএকশন (পিসিআর) মেশিনের উপর। এতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার ফলাফল মিলবে মাত্র ১৫ মিনিটে।
আইইডিসিআর বরাবর প্রেরিত অনুমতির আবেদন সম্পর্কে জাগোনাটোর২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলাম।
ওই আবেদনে জানানো হয়, টেলিমেডিসিন সেবায় দেশের শীর্ষস্থান অর্জনকারী সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অত্যাধুনিক ল্যাবের চারজন অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(৩ জন ডিপ্লোমা ও ১ জন বিএসসি) র্যপিড টেস্টিং কিটস দ্বারা করোনার প্রাথমিক নমুনা পরীক্ষায় সক্ষম। তাদের হাত ধরেই গত বছর দেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম সিংড়াতেই ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কাউন্টের মাধ্যমে সংক্রমণ পরীক্ষা হয়। র্যাপিড টেস্টিং কিটসের বৈশিষ্ট্যগত কারণে সমজাতীয় হরমোন, এইচবিবি, ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বি, প্রেগন্যান্সির মতো এই স্কীনিং টেস্টও এখানে করা সম্ভব। শুধু নমুনা সংগ্রহ থেকে ফলাফল তৈরীতে নিয়োজিতদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই’র ব্যবস্থা সাপেক্ষে অনুমতি প্রদানের পর যে কোন সময় থেকে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ল্যাবের সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অসীত কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের জন্য যদি পর্যাপ্ত পিপিই’র ব্যবস্থা করা হয়, তবে যে কোন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবো। এখন পর্যন্ত আমাদের কাজ শুরু করার মতো পিপিই রয়েছে। পরিস্থিতি এর ভবিষ্যত চাহিদা নির্ধারণ করবে।’
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এস এম আলমাস বলেন, ‘আমরা রক্ত পরীক্ষা থেকে করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি নির্ণয় করবো। যেহেতু ভাইরাস আইসোলেশন করছি না, তাই এই পরীক্ষা করতে আমরা সক্ষম এবং মানসিকভাবে প্রস্তত। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সেবা প্রদানের চেষ্টা করবো, যদি অনুমতি পাই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পলিমার চেইন রিএকশন-(পিসিআর) মেশিন প্রাথমিক নয়, মূলত চুড়ান্ত সংক্রমণ পরীক্ষার মেশিন। আর র্যপিড টেস্টিং কিটস প্রাথমিক সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য। আমরা প্রাথমিকভাবে সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারলে আইজিজি ও আইজিএম নেগেটিভ রোগীকে পিসিআর পর্যন্ত যেতে হবে না। এতে পিসিআরে চাপ কমবে, যারা প্রকৃত আক্রান্ত, তারাই নিশ্চিত সেবা পাবে। আমাদের ল্যাব বায়ো কেমিস্ট্রি এনালাইজারের মতো উন্নতমানের মেশিন দ্বারা অনেক আগে থেকেই সমৃদ্ধ। তাই বিভিন্ন কিটসের সাথে আমাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রাথমিকভাবে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষায় অগ্রাধিকার থাকবে। প্রয়োজনে সম্ভাব্য রোগীর নিকট গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে প্রস্তুত আমরা।’
যেভাবে কাজ করবে র্যাপিড টেস্টিং কিটসঃ
সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির একফোঁটা রক্ত কিটসের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। ১৫ মিনিটের মধ্যে কিটসের কন্ট্রোল লাইন আইজিজি ও আইজিএম মার্ক বরাবর এলে করোনা পজিটিভ, না এলে নেগেটিভ।