সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর, নাটোর॥
নাটোর সদর, নলডাংগা, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর উপজেলায় কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে তদারকি এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, এলাকাবাসীর প্রতিবাদ, জনপ্রতিনিধিদের নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনের অভিযান কোন কিছুই তোয়াক্কা করছে না নাটোরের গুরুদাসপুরের বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এখানকার তিন ফসলি জমিতে অবাধ পুকুর খনন চলছে। পুকুর খননের এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরেই এ উপজেলায় খাদ্য শস্য আবাদের জমি থাকবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সম্প্রতি উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে অন্তত ১৫টি পুকুর খননের সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায়, স্থানীয় মশিন্দা বাজারের পুর্বপার্শ্বে ২টি ,কাছিকাটা স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশে ১টি, মাঝপাড়ায় ১টি, ঝিনিগাড়িতে ১টি, বামনকোলায় ২টি, সাহাপুরে ১টি, হাাঁসমারি হাজীর হাটে ২সহ অন্তত ১৫টি স্থানে তিন ফসলি কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খনন।
এলাকাবাসীর তাদের অভিযোগে জানায়, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পুকুর খননের সাথে জড়িত স্থানীয় কয়েক মাটি ব্যবসায়ীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা গ্রামের কৃষকদের জমি চড়ামুল্যে অথবা দীর্ঘমেয়াদী ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করে। পুকুরের মাটি ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করে।
শনিবার(২১শে মার্চ) মশিন্দা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বামনকোলা, ঝিনিগাড়ি, সাহাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এস্কেবেটর (মাটি কাটার মেশিন) দিয়ে কাটা তিন ফসলী জমির মাটি। প্রতিটি এস্কেবেটর দিয়ে কাটা মাটি ৮/১০টি ট্রাক্টর ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে পাঠানো হচ্ছে সরাসরি ইটভাটায়।
স্থানীয়রা জানান, শুধু মশিন্দা ইউনিয়নেই ১৩০ থেকে ১৫০টি মাটি বহনের যান গ্রামীন মেঠোপথ ও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওই পরিবহনগুলো ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত মাটিবহনের ফলে গ্রামীন কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা-সড়ক মহাসড়ক, কালভার্ট ভেঙ্গে ছোট বড় গর্ত আর খনাখন্দে পরিনত হচ্ছে। আর অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা বলেন, পৌরসভার রাস্তা রক্ষায় জমির মালিকদের পুকুর খনন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। মাটিবাহী গাড়িগুলোকে পৌর সদরের রাস্তা পরিহার করে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পুকুর খননের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে তারা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসেনর নিষেধাজ্ঞা মানছে না। এমনভাবে চলতে থাকলে গুরুদাসপুর আবাদিজমি শূন্য হতে বেশি সময় লাগবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান, অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান অব্যাহত আছে। আইন অমান্য করে তিন ফসলি জমিতে কাউকে পুকুর খনন করতে দেয়া হবেনা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বিনাচাষের রসুন, পেঁয়াজসহ শীতকালীন শাক-সবজির আবাদের এলাকা হিসেবে গুরুদাসপুর পরিচিত। পুকুর খননের কারণে দিনদিন খাদ্যশস্যের আবাদ কমে আসছে এখানে। নতুন করে কোন ব্যক্তি যেন পুকুর খননের অনুমতি না পায়, সেজন্য কৃষি বিভাগ জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করবে।
প্রসঙ্গত, পুকুর খননের ঠেকাতে ও নাটোরের কৃষিজমি রক্ষার্থে ঢাকার ‘ল’ইয়ারস সোসাইটি ফর ল’ নামে একটি মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষে মহাসচিব অ্যাড. মেজবাহুল ইসলাম আতিক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন (রিট পিটিশন নং ৫৩২৭/২০১৯)। গত বছর ১২ মে ওই রিটের শুনানি শেষে নাটোর সদর, নলডাংগা, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর এই পাঁচটি উপজেলায় কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে তদারকি এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।