নাটোর অফিস॥
করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পৌরসভার দুই শতাধিক বয়স্ক প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের গণসমাবেশ ঘটিয়ে তালিকা যাচাই বাছাই করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল। তিনি পদাধিকার বলে স্থানীয় প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতা বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি। প্রায় দুই শতাধিক লোকের সমাগমের মাধ্যমে ভাতাভোগী বাছাইয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে উপজেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আজ বুধবার (১৮ মার্চ) বেলা ১১ টায় বাগাতিপাড়া পৌরসভা চত্বরে সম্ভাব্য ভাতাভোগী বাছাইয়ে এ গণজমায়েত ঘটে।
জানা যায়, করোনা আতঙ্কে গত ১৬ই মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি সকল প্রকার গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও সংক্ষিপ্ত করা হয়। এছাড়া ওইদিন (১৬ই মার্চ) রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভা থেকে নাটোর জেলায় সব ধরণের গণজমায়েত এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়। এমন নির্দেশনার পরও উপজেলা প্রশাসন ভাতাভোগীদের যাচাই বাছাইয়ের নামে দুই শতাধিক লোকের গণজমায়েত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন জনসাধারণ।
বাগাতিপাড়া পৌর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ জানান, করোনা ভাইরাস নিয়ে এমনিতেই তারা আতঙ্কে রয়েছেন। সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসায় আতঙ্ক কিছুটা কাটলেও নির্দেশনা অমান্য করে বাগাতিপাড়ার ইউএনও এবং সমাজসেবা অফিসার দুই শতাধিক বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতা ভোগীদের যাছাই বাছাই কমিটির সামনে ঊপস্থিত হতে বাধ্য করেছেন। উপজেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি আমলে নেয়নি। নিলে এভাবে গণজমায়েত করে স্থানীয়দের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতেন না।
বাগাতিপাড়ার পৌরসভার সোনাপাতিল গ্রামের আহম্মেদ আলী বলেন, সরকারী নির্দেশনা থাকা সত্বেও গণজমায়েত করা ঠিক হয়নি। এখানে উপস্থিত হতে ভাতাভোগীদের বাধ্য করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, বয়ষ্ক ব্যক্তিরা করোনা সংক্রমণে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য হলেও শতাধিক বৃদ্ধা ছিলেন ভাতাভোগী বাছাইয়ের কার্যক্রমে। এতে ঝুঁকির প্রশ্ন থেকেই গেল।
এ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে পহেলা মে’র মধ্যে ভাতাভোগীদের তালিকা না পাঠালে বরাদ্দ ফেরত চলে যাবে। তাই পৌর এলাকার বয়স্ক প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের ভাতা বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তাদের যাছাই বাছাই কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল গণজমায়েতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সম্ভাব্য ভাতাভোগীদের নিজেদের স্বার্থেই বর্তমান পরিস্থিতিতে আজ এই বাছাই কাজ হয়েছে। তবে আগামী দিন থেকে অনান্য ইউনিয়নগুলোতে এ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন জমায়েত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি যাতে আর কোথাও না হয় সে ব্যাপারে দ্রুত নির্দেশনা দেয়া হবে।