নাইমুর রহমান:
নাটোরে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আম বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এমন দামে আম বিক্রিকে একপ্রকার লোকসান বলছেন চাষীরা। মধ্যস্বত্বভোগির হাত ঘুরে এমন দামে আম কিনছেন ক্রেতারা। ফলে লাভের মুখ দেখছেন মধ্যস্বত্বভোগীরাই। সম্প্রতি নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দাম না পাওয়ায় রাস্তায় আম ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছে চাষীরা।
চলতি মৌসুমে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আম সরবরাহের নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়ায় গাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহে তৈরী হয়েছে সময়ের ব্যবধান। এক জাতের আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করতেই আরেক জাতের আম সংগ্রহের উপযোগি হয়েছে। আর বৈরী আবহাওয়া সত্বেও আমের ভালো ফলনে কৃষক খুশি। রোজার শুরুতে বাজারে আম আসায় চাষীরা ভালো দাম পেলেও সম্প্রতি কমতে শুরু করেছে আমের দাম।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষণভোগ মনপ্রতি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪’শ টাকা, খিরসাপাত ৭শ’ থেকে ৮’শ টাকা ও অনান্য ৩/৪টি জাতের আম ৫’শ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রানী পছন্দ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গোপালভোপ, কালুয়া, হাঁড়িভাঙ্গা ল্যাংড়া,জাতের আম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, ১০ লাখ টাকা খরচ করে একটি বাগান নেন তিনি। সম্প্রতি নাটোর শহরের স্টেশন বাজারে বিক্রির জন্য ল্যাংড়া ও লক্ষণভোগ জাতের আম আড়তে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যে দরে বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না।
আরেক মৌসুমী ব্যবসায়ী গুলজার হোসেন বলেন, আমের দাম কমে যাওয়ায় বিক্রির ঝুঁকি না নিয়ে লক্ষীপুর, রংপুর, মৌলভিবাজার পাঠিয়েছি। বাজার ভালো না হলে মূলধন তোলা যাবে না।
এদিকে গত ২২ শে মে নাটোরে উৎপাদিত ১২টি জাতের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী ২৫শে মে থেকে ২৫ শে জুলাই পর্যন্ত বেঁধে দেয়া এ সময়ের অর্ধেক অতিক্রম হওয়ায় খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লকনাসহ কয়েকটি জাতের আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আর আম্রপালী, মল্লিকা ও ফজলী ১০ই জুলাই, বারী(৪) ১৫ই জুলাই এবং সর্বশেষ আশ্বিনা আম ২৫শে জুলাই গাছ থেকে সংগ্রহ হবে। একমাসে সংগৃহীত আমগুলো বাজারে কম দামে বিক্রি হওয়ায় বাকী আমগুলো বিক্রির সময় লোকসানের আশঙ্কা করছে চাষীরা।
জেলা হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রমতে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাটোরের সাতটি উপজেলার মধ্যে লালপুর,বাগাতিপাড়া এবং বড়াইগ্রাম এই তিনটি উপজেলায় আম চাষ হয়। চলতি বছর প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬০হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে জেলার লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া, লালপুর সদর, গোপালপুর, ধুপইল, দুয়ারিয়া এবং পাশ্ববর্তী বাগাতিপাড়া উপজেলার, মালঞ্চি, তামালতলা, জামনগর এবং পাকা ইউনিয়নে বিভিন্ন বাগানেও আমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। এখন বাগানে শেষ সময়ের পরিচর্যার কাজ চলছে। অচিরেই আম সংগ্রহের উপযোগি হবে। তবে আশংকার বিষয়, আগাম আম কিনতে নেই ক্রেতার আগমন।
শামসুল ইসলাম নামের এক বাগান মালিক জানান, বেঁধে দেয়া সময়ে সংগৃহীত আমের দাম বাজারে নেই। বাজারে আমের সরবরাহ বেশি থাকায় ভোক্তারাও আম কিনছেন বেশী। তাই শেষ মাসে সংগৃহীত আম কি পরিমাণে ক্রয় করবেন ভোক্তারা সেটি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
লালপুরের আম চাষী শাহ আলম বলেন, বিগত বছরগুলোতে মৌসুম শুরুর আগেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা আম কেনার ফরমায়েশ দিতেন। কিন্তু এখন কেউ আসছেন না।
আব্দুর রাজ্জাক নামে ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় বাজারে আমের দাম একদমই নেই। ১০/১২ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করতে গেলে পুঁজিটাই থাকে না।
বড়াইগ্রামের আহমেদপুর বাজারে আমের আড়ৎদার বিপ্লব হোসেন বলেন, প্রতি মৌসুমে আম বিক্রি থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হলেও এ বছর আম ক্রয়ে ক্রেতা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাগান মালিক, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও আড়তদার সকলেই পথে বসবে।
তবে কম দামে আম বিক্রি হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। শহরের নীচাবাজার এলাকার মৌসুমী ফলের বাজারে আম কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে ১০ কেজি খিরসাপাত আম কিনেছেন তিনি। অথচ মাসখানেক আগেও প্রতিকেজি ৪৫ টাকা দরে একই আম কিনেছেন।
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মিফতাহুল বারী আমের দাম না থাকার সত্যতা স্বীকার বলেন, আমের দাম কমে যাওয়ায় প্রকৃত আম চাষি ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আমের দাম বৃদ্ধি পেলে কৃষক লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।