নাটোর অফিস॥
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে তখন উত্তাল সারা পূর্ব পাকিস্তান। দানা বাঁধছে আন্দোলন। সারাদেশের মতো ভাষা আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিলো নাটোরেও। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে নাটোরে আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষা সৈনিক ফজলুল হক। নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ছাত্র থাকাকালীন নিজ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেন তিনি। পাকিস্তান সরকার ছাত্র ফজলুল হকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। এতে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয় দীর্ঘদিন। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি এ ভাষা সংগ্রামী।
১৯৩৮ সালে সিংড়া উপজেলার দমদমা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন ফজলুল হক। তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক ফজলুল হক বর্তমানে নাটোরের কান্দিভিটা এলাকায় বসবাস করেন। ২০১০ সালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তিতে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় ভাষাসৈনিক ফজলুল হককে।
ফজলুক হক জানান, ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা। পাব-সরকার সেদিন রাজপথে মিছিলরত ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালালে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিক, বরকতসহ বেশ কয়েকজন শহীদ হন। পরদিন ২২ শে ফেব্রুয়ারি এ খবর নাটোরে পৌঁছালে ছাত্র ছাত্র-জনতা মাতৃভাষা রক্ষার দাবীতে নেমে পড়েন রাজপথে। এদিন নাটোরের জিন্না মেমোরিয়াল স্কুলের (বর্তমানে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) নবম শ্রেণীর ছাত্র ক্লাস ক্যাপ্টেন ফজলুল হক ভাষার জন্য তার স্কুলের সকল ছাত্রকে সংগঠিত করেন। তারপর সবাই মিলে শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখান থেকে ওই স্কুলের শিক্ষকদের অনুমতিক্রমে ছাত্রীদের নিয়ে চলে যান মহারাজা জে এন উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে তিনটি স্কুলের সব শিক্ষার্থী মিলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগান দিয়ে ফজলুল হকের নেতৃত্বে শহরে মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ অপরাধে হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে।
সেদিনের মিছিল-মিটিংয়ে অগ্রগামী ফজলুল হক স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তার প্রত্যাশা, অনেক ত্যাগ আর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাভাষার সঠিক চর্চা অব্যাহত থাকবে। শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারের সঠিক মর্যাদা দেওয়া হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠারে শহীদ মিনার থাকবে।
ফজলুল হক বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি বলে ক্ষোভ নেই। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে নিজের শরীক হওয়া অন্যদের সংগঠিত করতে পেরেই ভালো বোধ করি। তবে কষ্ট লাগে, এতো রক্ত আর আন্দোলনের অর্জন বাংলা ভাষার বিকৃত ব্যবহার, অপপ্রয়োগ দেখে। এই বাংলা ভাষায় আরো বেশি সাহিত্য চর্চা হওয়া খুবই দরকার।’
স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা পাননি ৮২ বছরের এই মহান ভাষা আন্দোলনের সংগঠক। ভাষা সৈনিক ফজলুল হক তার জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাবেন এমনটি প্রত্যাশা তার পরিবার আর নাটোরবাসীর।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, প্রতি বছর একুশে বইমেলায় ভাষা সৈনিক ফজলুল হককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগামীতেও তাকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে চেষ্টা করা হবে।