নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নাটোর-পাবনা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী বনপাড়া বাজার জেলার প্রধান ‘বাণিজ্য কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। পাবনার রুপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পাথরসহ ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয় মহাসড়কের এই বাজার এলাকাটি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ প্রবেশদ্বারটির মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তার কারণে ধূলায় নাজেহাল বনপাড়াবাসী। খোদ বনপাড়া পৌরসভার সামনের সামান্য এ রাস্তাটুকু নিম্নমানের উপকরণে ‘কচ্ছপ গতিতে’ সংস্কারের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী, রাস্তার দুই পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের যাত্রীরা। ভোগান্তি আরও বেশি রাস্তার দুইপাশে বসবাসকারী মানুষদের। এই বেহাল অবস্থা দিন দিন বেড়ে চললেও আমলে নিচ্ছেন না ঠিকাদার। আর ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সৃষ্ট ধূলায় বায়ু দুষণ থেকে পথচারীদের সাময়িক রেহাই দিতে পানি ছিটাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার তথ্য মতে, প্রতিদিন নাটোর-পাবনা মহাসড়ের বনপাড়া বাজার অতিক্রম করে প্রায় দুই লাখ হালকা, মাঝারি ও ভারী যানবাহন। সেই সাথে স্থানীয় ৪টি কলেজসহ ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে এই পথে। এছাড়া বনপাড়া উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হওয়ায় সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে এই পথে।
সম্প্রতি বনপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ডিভাইডাররের দুই পাশে কার্পেটিং উঠে তৈরী হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। সেই খানাখন্দ ঢেকে রাখা হয়েছে নিম্নমানের ইট দিয়ে। ভারী যানবাহনের চাপে ইট ভেঙ্গে গুড়া হয়ে আবারো গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সেই গুড়া ধূলা হয়ে বাতাসে মিশছে। পথচারীরা নাক ঢেকে চলাচল করছেন। গর্তে যানবাহন আটকে গেলেই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাত কিংবা দিন, সবসময় একই দুর্ভোগ।
জানা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের নাটোর অংশ সংস্কারের জন্য খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ পায়। ওই প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের কিছু এলাকায় কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বনপাড়া পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটুকুতে এখনও কাজ শুরু করেনি। স্থানীয়দের দাবী মুখে খানাখন্দে ইট ফেলে কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ)জানায়, বনপাড়া বাজারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া নাটোর-পাবনা, ঢাকা-পাবনা, ঢাকা-কুষ্টিয়া ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাপে কয়েক বছর আগে সড়কটিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চার মাস আগে সওজ ওই অংশে ইট বিছিয়ে দেয়। নভেম্বরে টেন্ডার আহ্বানের পরে কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তদারকির অভাবে কাজের এমন ধীরগতি। তাদের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার করে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
সড়ক সংলগ্ন দোকানী মিলন হোসেন বলেন, ‘এতোটা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কয়েক মাস ধরে শুধু ইট বিছানো। সংস্কারের লেশমাত্র নেই। কি যে দুর্ভোগ, তা বর্ণনা করা কঠিন।’
কালিকাপুর এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুধু রাস্তার কারণে মারাত্নক বায়ু দুষণের শিকার বনপাড়াবাসী। এমন ধূলা আগে ছিলো না। ধূলা থেকে রাতেও নিস্তার নাই।’
কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী সালামত আলী বলেন, ‘সপ্তাহে হাটের দিন রাস্তার পাশে সবজি-কাঁচামালের পসরা সাজিয়ে বসা যায় না। রাস্তায় গাড়ি চললেই ধূলা ছিটে এসে সবজির গায়ে পড়ে।’
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের সাথে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায় নি।
বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন জুয়েল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পৌরসভার কাজ কিন্ত সকাল-বিকাল রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধূলা দূর করা নয়। তবুও আমরা পৌরবাসীর স্বার্থে এটি করছি। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এই স্থানের এমন দূর্দশা মেনে নেয়া কষ্টকর। সওজের উচিত কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নয়েজ রহমান বলেন, ‘মহাসড়কটি পরিদর্শন করেছি। রড-সিমেন্ট দিয়ে রাস্তাটি ঢালাই করা হবে। কাজ দ্রুত শেষ হলে দুর্ভোগ কমে আসবে।’