নাটোর অফিস॥
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের বলদখাল ও মরা আত্রাই নদী দখল করে পদ্মবিলের সংযোগ স্থলে নির্মিত বাঁধসমূহ অপসারণ শুরু হয়েছে। এতে পদ্মবিলের প্রায় দুই হাজার বিঘা তিন ফসলি জমির স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন হতে চলেছে। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর কৃষকের গলার কাটা পদ্মবিল বাঁধ অপসারণ শুরু হওয়ায় খুশি কৃষক। স্থানীয় সাতটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় এক হাজার কৃষক বাঁধ অপসারণে উপকৃত হবেন।
শনিবার(১৮ই জানুয়ারী) থেকে বাঁধ অপসারণের এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার ওমর শরীফ চৌহান বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে পদ্মবিল সংলগ্ন গাঙ্গইল, কাকবাড়িয়া, বলদখাল, ধরাইল, ডাঙ্গাপাড়া, গোয়ালদিঘী ও বামন গাঙ্গইল গ্রামের তিন ফসলি জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে জলাবদ্ধতার কারণে যা কৃষক ও কৃষিনির্ভরশীল অনেক ব্যক্তিদের কর্মহীন করে তোলে। বাঁধ অপসারণের মাধ্যমে জলাবদ্ধ জমিগুলো ধীরে ধীরে চাষোপযোগি করার উদ্যোগ নেয়া হলো।
ভুক্তোভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বলদখাল ও মরা আত্রাই নদী দখল করে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলো গোবিন্দপুর গ্রামের আজম আলী ও নিজাম উদ্দিনসহ এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের দেখে আরো কয়েকজন ব্যক্তি উৎসাহিত হয়ে খাল ও নদীসংলগ্ন নিজেদের জমি খাল-নদীতে বিলীন করে সম্প্রসারিত পরিসরে পুকুর তৈরী করেন। এতে বিলের পানি বিলে আটকেই তৈরী হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
দখলদার সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি ১৯৭৪ সালে কবুলিয়ত দলিল সম্পাদন করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে রাজস্ব বিভাগের মাধ্যমে নদীর শ্রেণীকে মাছ চাষের জন্য পুকুর শ্রেণীতে পরিবর্তন করা হয়েছে। একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আজম আলী বলেন তিনিও একইভাবে দেড় একর জমি কবুলিয়ত দলিল সম্পাদন করেছেন।
দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, বাগবাড়িয়া এবং বলদখালের দু’টি মৌজায় মরা আত্রাই নদী ও বলদ খাল বহু বছর আগে অবৈধভাবে পত্তন দিয়েছিলো রাজস্ব বিভাগ। সম্প্রতি কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই অবৈধ পত্তন বাতিলের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয় যার ফলশ্রুতিতে বাঁধ অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
নাটোর সদর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীসংলগ্ন পদ্মবিলসহ আশেপাশের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রশাসন বরাবর আবেদন করলে বিষয়টি আমলে নিয়ে দখলকারীদের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে স্ব স্ব উদ্যোগে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। দখলকারীরা সাড়া না দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের নিয়ে বাঁধ অপসারণ করে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের পথ তৈরি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, যেসব খাল বা নদী মাছ চাষের নামে দখল করে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে পদ্মবিল বাঁধ অপসারণের মাধ্যমে। জানান। এ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।