নাটোর অফিস॥
ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেছেন, স্বাধীন দেশের নব্য মালিক দুর্নীতিবাজ ও লুটেরারা। অথচ রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকদেরই রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গত এক দশকে দেশ থেকে ৯ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরারা। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তারাও রাজাকার।
আজ মঙ্গলবার(৩১শে ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষক-খেতমজুর সমাবেশে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন রাজশাহী-২ আসনের এ সংসদ সদস্য।
ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বন্যা-খরা-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি নিয়ে ফসল উৎপাদন করে কৃষক। কৃষকের কঠোর পরিশ্রমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে আর বাহবা নেয় সরকার। প্রতিদানে কৃষক নায্যমূল্যটুকুও পায় না। সরকার ধান ক্রয় কার্যক্রম চালু করলেও তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া কৃষকরা ধান দিতে গুদামের দরজা পর্যন্ত পৌছাতে পারে না।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কৃষক যাতে ধানসহ উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পায় সেজন্য কৃষিবীমার দাবী করেছিলাম আমরা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা আবারও এই দাবী জানাচ্ছি। উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্য ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহের পথে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল মওকুফ করতে হবে কৃষকের স্বার্থে। কৃষকের স্বার্থে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কৃষিজমির মালিকানা কৃষকদের হাতে রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কৃষি জমি যেন শিল্প গোষ্ঠীর হাতে না চলে যায় সেজন্য দেশের কৃষকদের সংগঠিত হতে হবে। কৃষক কৃষিজমি বঞ্চিত হলে আর অস্তিত্ব থাকবে না। কৃষকের ভূমি মালিকানা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে ভূমিনীতি গ্রহণ করতে হবে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কৃষক-ক্ষেতমজুরের সংগ্রাম অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের ও রাজনৈতিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। আমরা আমাদের অধিকার ফেরাতে চাই। অন্যকে অন্যের অধিকার দিতে চাই। এজন্য কৃষক-মজুর সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিবর্তনের লড়াই শুরুর এখনি সময়।
দেশের প্রকৃত উন্নয়নে কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবী জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উন্নয়নের সূতিকাগার আমাদের গ্রামগুলো আর কৃষকরা হলো সভ্যতার কারিগর। তাদের বাঁচাতে হবে। এদেশে ধণিকশ্রেণির লুটেরারা কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপী। রাষ্ট্র এদের কিছুই করতে পারে না। অথচ আমাদের কৃষকরা ঋণ তো দূরের কথা ফসলের নায্য দামই পায় না। শুধু ঢাকা শহরেই বড় বড় কল-কারখানা নির্মাণ আর মানুষের ভীড় মানেই দেশের উন্নয়ন নয়। যেখানে কৃষকের স্বার্থ রয়েছে সেখানে কৃষকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের নাগরিকপঞ্জি প্রসঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেব ভারত এতোদিন বিশ্ব পরিমন্ডলে পরিচিত হলেও নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে চরম ধর্মভীরুতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। এটি উপমহাদেশের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও অসাম্প্রদায়িক চেতনার হতে পারেনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাষ্ট্র হতে হলে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ত্যাগ করে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, লুটেরাদের প্রতিহত করার ডাক দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশবাসীর প্রতি এমন আহ্বান জানান, তখন বুঝতে হবে দেশ ভালো নেই। সরকারের একার পক্ষে নয়, সাধারণ জনগণ এগিয়ে এলেই লুটেরাদের মূলোৎপাটন হবে। আমরা সরকারের পাশে আছি।
জাতীয় কৃষক সমিতি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সভাপতিত্বে এ সময় অনান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, জাকির হোসেন রাজু, কেন্দ্রিয় কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রি কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দীন, আনোয়ারুল হক, বগুড়া জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি আবদুর রউফ, ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, নাটোর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম প্রমুখ।