আল আফতাব খান সুইট, বাগাতিপাড়া
৩০ বছর আগে মাথা গোজার ঠাঁই আর চাষাবাদের জন্য একখন্ড জমি চেয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করেছিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের ভূমিহীন আক্কেল আলী। আবেদনের প্রেক্ষিতে জামনগর মৌজায় ৪৯ শতাংশ জমি বন্দোবোস্ত পান তিনি। তবে জীবদ্দশায় সেই জমি ভোগ-দখল করতে পারেননি তিনি। স্থানীয় দখলদারদের জোরালো তৎপরতায় তার মৃত্যুর পরও জমি বুঝে পাননি ওয়ারিশ স্ত্রী কদভানু। দীর্ঘ ৩০ বছর দখলদারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা, আইনী লড়াই আর প্রশাসনিক জটিলতা শেষে অবশেষে সেই জমির দখল বুঝে পেয়েছেন মরহুম আক্কেল আলীর স্ত্রী কদভানু।
জামনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, পৃথক দুই দাগের ৪৯ শতাংশ জমি বুঝিয়ে সীমানা চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে কদভানু জমি ভোগ-দখল করবেন।
মঙ্গলবার(২৪শে ডিসেম্বর)কদভানুকে জমির দখল বুঝিয়ে দেন বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল। কেউ যেন জমি পুনঃদখল করতে না পারে সেজন্য জমি মেপে আইল তৈরী করে সীমানাও চিহ্নিত করিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জামনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, একই ইউনিয়নের জামনগর মৌজার ১০০৮৩ দাগের ২০ শতাংশ এবং ১০১১২ দাগের ২৯ শতাংশ জমি এক নম্বর খাস খতিয়ানের কৃষি শ্রেণীর জমি। জমি দুটি ১৯৯০ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ভূমিহীন আক্কেল আলী ও তার স্ত্রী কদভানুর নামে ভূমি অফিস থেকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। শুধু এই জমি দুইটির সাথে লাগোয়া হওয়ার কারণে প্রথম দাগের জমির ২০ শতাংশ একই এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে জহুরুল, মহুরুল ও কাবিল এবং দ্বিতীয় দাগের ২৯ শতাংশ জমি একই এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ভুট্টু দখল করেন। ফলে ভূমিহীন আক্কেল-কদভানু দম্পতি আর তাদের জমি বুঝে পাননি। এর কিছুদিন পরই কদভানুর স্বামী আক্কেল আলী মারা যান। এদিকে জমিগুলো নিজেদের দাবী করে বন্দোবস্ত দেওয়ার অভিযোগ এনে দখলদাররা সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ভূমিহীন কদভানুর পক্ষে রায় দেয় আদালত। রায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে দখলদাররা একজোট হয়ে জেলা জজ আদালতে আপিল করলে আবারো আদালতের রায় দখলদারদের বিপক্ষে যায়। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে জমি নিয়ে যুদ্ধ। সবশেষ দুই বছর আগে বাগাতিপাড়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দখলদারদের থেকে জমি উদ্ধার করেন। তিনি অন্যত্র বদলীর পরে দখলদাররা আবারও জমিটির দখল নেন। ভূমিহীন কদভানুর বিষয়টি জানতে পেরে গত সপ্তাহে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল জমিটি আবারও দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে কদভানুকে ভোগ দখলের নির্দেশ দেন। কিন্তু দখলদাররা এর পরও কদভানুকে জমিতে নামতে দেননি। এ খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল গ্রাম পুলিশ ও ভূমি অফিসের লোকজন নিয়ে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে জমি উদ্ধার করে বন্দোবস্ত গ্রহীতা কদভানুকে জমি বুঝিয়ে দেন।
জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস জানান, কদভানু বন্দোবোস্ত পাওয়া জমি ভোগ করতে পারছিলেন না স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে তিনি লড়াই চালিয়ে আজ সফল হলেন।
কদভানু বন্দোবোস্ত জমি বুঝে পেয়ে আপ্লুত। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, যারা এতোদিন তার জমি দখল করেছিলো তারা অনেক প্রভাবশালী। জমিটির জন্য আইনী লড়াই চালাতে গিয়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন এ জমিতে ঘর তুলে থাকার পাশাপাশি চাষাবাদ করতে চান কদভানু। আবারও যেন তার জমি দখল না হয় সেজন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, ‘বেশ কয়েকবার দখলদারদের নোটিশ করে কদভানুর জমি ছেড়ে দিতে বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। ফলে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য দখলদারদের উচ্ছেদ করে এবং বন্দোবস্তগ্রহীতা কদভানুকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’