নাটোর অফিস॥ নাটোরে শুক্রবার দুপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার শংকা কাটতে না কাটতে শনিবার প্রায় একই সময়ে আবারো ট্রেন দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দেয়। রেল লাইনের ওপর পরিত্যক্ত শ্লিপার পড়ে থাকতে দেখে চালক চলন্ত ট্রেন থামিয়ে দিলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় খুলনা থেকে চিলাহাটিগামী আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন। শনিবার বেলা ১টার দিকে চিলাহাটিগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেন নাটোর স্টেশনের ৩ নং লাইনে ঢোকার সময় প্লাটফরম সংলগ্ন লাইনের ওপর পরিত্যক্ত শ্লিপার পড়ে থাকতে দেখেন ট্রেন চালক। তিনি দ্রুত ও দক্ষতার সাথে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এর আগে শুক্রবার প্লাটফরম সংলগ্ন চকবৈদ্যনাথ এলাকার লেভেল ক্রসিং খোলা থাকার কারনে নন স্টপ কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি এলাকা অতিক্রম করার সময় ৬ জন যাত্রি সহ একটি প্রাইভেট কার লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। কিন্তু প্রাইভেট কার চালক দক্ষতার সাথে কারটি থামাতে সক্ষম হলে দুর্ঘটনাসহ প্রানহানির হাত থেকে রক্ষা পায় একই পরিবারের ওই ৬ জন।
প্রত্যক্ষদর্শি সুত্রে জানাযায়, শনিবার দুপুর ১টার দিকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রি ওঠানো ও নামানোর জন্য নাটোর স্টেশন প্লাট ফরমের ১নং নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এসময় খুলনা থেকে চিলাহাটিগামী আন্তনগর রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনকে স্টেশনের অদুরে জংলি এলকায় আউটার সিগনালে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অপরদিকে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামী নন স্টপ আন্তনগর ট্রেনের নাটোর অতিক্রম করার সময় হওয়ায় প্লাটফরমের ২ নং লাইন ক্লিয়ার করে আউটার সিগনাল বন্ধ রাখা হয়। ফলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে নাটোর স্টেশনে ঢোকার আগে আমহাটি আউটার সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একই সময়ে চিলাহাটিগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে প্লাটফরমের ৩ নং লাইনে ঠোকানো হয়। লইন ক্লিয়ার পেয়ে রুপসা ট্রেনটি স্টেশনে ঢোকার মুখে চকবৈদ্যনাথ লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার পর চালক লাইনের ওপর পরিত্যক্ত শ্লিপ্র পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তিনি দুর্ঘটনা এড়াতে দক্ষতার সাথে ট্রেনটিকে লেভেল ক্রসিং এলাকায় দাঁড় করাতে সক্ষম হলে ট্রেনটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এসময় প্রত্যদর্মিদের চেৎকারে এলাকায় আতংকের সৃষ্টি হয়। পরে শ্লিপার সরিয়ে লাইন ক্লিয়ার করার পর ট্রেনটি ৩ নং লাইনে প্রবেশ করে।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়,একদল শ্রমিক দুই নম্বর প্লাটফরমে স্তুপাকারে রাখা পরিত্যক্ত শ্লিপার নিয়ে ৩ নং লাইনের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে তুলছিল। ঠিক ওই সময়ে রুপসা ট্রেনকে ওই লাইনে ঢুকতে দেখে শ্লিপার ফেলে তারা দুরে সরে যায়। পরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখে ট্রাক সহ তারা সটকে পড়ে।
পরবর্তীতে দ্রুতযান ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে স্টেশন ত্যাগ করার অন্তত ২০ মিনিট পর আমহাটি আউট সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা ননস্টপ কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাটোর স্টেশন অতিক্রম করে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন নাটোর স্টেশন অতিক্রম করার পর রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
দায়িত্বরত সহকারী স্টেশন মাষ্টার জমসেদ আলী জানান, তিনি একই সময়ে তিনটি ট্রেন নাটোর স্টেশন অতিক্রম করার জন্য তিনটি লাইন ক্লিয়ার রাখেন। এজন্য রুপসা ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনকে স্টেশনের দুপাড়ে আউটারে রাখেন। রুপসা ট্রেনকে ৩ নং লাইনে নিয়ে দ্রুতযান স্টেশন ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু রুপসা স্টেশনে ঢোকার আগেই দাঁিড়য়ে পরে লাইনের ওপর পরিত্যক্ত শ্লিপার পড়ে থাকার জন্য। তখন ট্রেনটি খুব ধীরে স্টেশনে ঢুকছিল। লাইনে শ্লিপার পড়ে থাকার পরও কেন লাইন ক্লিয়ার দেয়া হয় জানতে চাইলে স্টেশন মাষ্টার বলেন, এসএসএই’র তত্বাবধানে থাকা শ্লিপারগুলি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতার নিয়োজিত শ্রমিক প্লাটফরম থেকে শ্লিপার সরানোর বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি। বিষয়টি কেউ তাদের বলেনি। ট্রেন ঢুকতে দেখে তারা শ্লিপার ফেলে সরে লাইন থেকে সরে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানিয়েছে। স্টেশন মাষ্টার বা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে শ্লিপার সরানোর কথা থাকলেও তারা তা করেননি। ঘটনার পর থেকে নিলাম পার্টির কাউকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাদের বিষয়ে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হয়েছে।