জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সদর॥
‘জানতাম দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসা। এবার তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম চিড়িয়াখানা!’
ঈদের পরদিন সকালে রাজশাহীর আড়ানী থেকে আসা অনিক ও তার বন্ধু রুবায়েত বলছিলেন উত্তরা গণভবন দেখতে এসে তাদের অনুভূতির কথা। উত্তরা গণভবন এখন অনেকটাই উন্মুক্ত দর্শনার্থীদের জন্য- টিভিতে এমনটি দেখার পর তারা নাটোরে এসেছে।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে গণভবনে স্থানীয়দের চেয়ে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীর সংখ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। রাজধানী ঢাকার সাভার থেকেওে দর্শনাথীবাহী বাস দেখা গেছে গণভবন ফটকের আশেপাশে। এছাড়াও রংপুর, বগুড়া রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া থেকেও এসছেন দর্শনার্থীরা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবন গত বছরের শেষ দিকে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গণপূর্ত বিভাগের কবল থেকে জেলা প্রশাসন ঐতিহাসিক স্থাপনাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বদলে যেতে শুরু করে গণভবন। সংস্কারকাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। সম্প্রাসরণ ও সংযোজন কাজও পুরোদমে শুরু হয়। রাজপরিবারে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী ও দূর্লভ স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ শুরু করা হয় যা বর্তমানে রাজ সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ কাজে প্রশাসন সাধুবাদ কুড়িয়েছে নাটোরবাসীর। তবে চিড়িয়াখানা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় জনগণ ও দর্শনার্থীদের মধ্যে। ঈদের ছুটিতে গণভবন দেখতে আসা মানুষরাও সরব ছিল সংগ্রহশালা ও চিড়িয়াখানা নিয়ে।
মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পর গণভবনের মূল প্যালেসে যেতে হাতের বাম দিকে রাণীঘাট এগুতেই চোখে পড়ে চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে হরিণশালা, বানর, ময়ুর, টিয়াপাখি। শিশুরাই শুধু আনন্দিত চিড়িয়াখানা পেয়ে, হতাশ অন্য দর্শনার্থীরা।
উত্তরা গণভবনকে কল্পনার পটে এঁকে এনে বাস্তবের সাথে খুব কমই মিল পেয়েছে কোন কোন দর্শনার্থী। আবার কারো কারো মতে, অনেক বছর পর উত্তরা গণভবনে বইছে হয়েছে ঐতিহ্যের সুবাতাস।
রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে সপরিবারে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘গণভবনের ভিতর চিড়িয়াখানা থাকতে পারে, ভাবিনি। দেখে অবাকই হলাম। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এমন চিড়িয়াখানা কাম্য নয়। তাছাড়া অন্যসব ঠিক আছে’।
বগুড়ার শেরপুর থেকে গণভবন দেখতে এসে সোহাগ রহমান বলেন, আগের চেয়ে গণভবন এখন আরো সুন্দর দেখছি। তবে গাইড নেই এখানে যিনি সবকিছু চিনিয়ে দেখাবেন।’
পাবনার চাটমোহর থেকে বেড়াতে আসা সুজন দাস বলেন, ‘দেখার মত সংগ্রহশালা ছাড়া আর কিছুই নেই গণভবনে। এটি এখন চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে।’ চিড়িয়াখানা যে কারণে ভালো লাগছে না সে প্রসঙ্গে একটু হেসে সুজন বলেন, ‘আমরা তো আর শিশু নই যে চিড়িয়াখানা দেখে আনন্দ পাবো।’
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে আসা শাকিল হোসেন বলেন, ‘ঢুকতে গিয়ে দেখলাম সংস্কার ও সম্প্রসারিত হবে গণভবন। তবে এর একটি ঐতিহাসিক ভ্যালু আছে , যা সেই রাজবংশের ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জড়িত। সংস্কার কাজে হাত দিয়ে যেন ঐতিহাসিক ভ্যালু নষ্ট না করা হয়, সে দাবী করছি। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, অন্য কোন স্থানে যদি চিড়িয়াখানা করা হয়।’
রাজশাহীর বাগমারা থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী শাহীনুর রহমান জানান, শুধু নাটোর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের কাছে উত্তরা গণভবন একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ঐতিহ্য ধারণ করা জায়গায় চিড়িয়াখানা একদম বেমানান। দেশের কোথাও ঐতিহাসিক স্থাপনার ভিতর চিড়িয়াখানা আছে বলে জানা নেই। তবে রাজ সংগ্রহশালার জন্য কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।’
একই এলাকার রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, ইটালিয়ান গার্ডেন ও মূল প্যালেসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা সাধারণ দর্শনার্থীদের তবে ভিআইপি ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবাধে সেখানে প্রবেশ করছে। এমনকি রাজ সংগ্রহশালাতেও ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে কেউ কেউ প্রবেশ করছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ সংগ্রহশালার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আলী আশরাফ জানান, তারা সবার গতিবিধি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন।
চিড়িয়াখানা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, ‘রাজা দয়ারামের সময় থেকেই গণভবনে চিড়িয়াখানা ছিল। এই চিড়িয়াখানার পশু নিয়েই রাজশাহী চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়। সেই পশুগুলোই চেষ্টা করেছি। সংস্কারসহ এসব কারণে গণভবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে’।
এদিকে উত্তরা গণভবনের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে তারা শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করছে।