নাটের অফিস ও নিজস্ব প্রতিবেদক, নলডাঙ্গা॥
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফেকেট(জেডিসি)পরীক্ষায় এক পরীক্ষার্থী বয়স গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। ওই পরীক্ষার্থীর নাম আজিজ(৩৫)। কেন্দ্র সচিব বিষয়টি টের পাওয়ায় পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান আজিজ। তার প্রকৃত বয়স আড়াল করে রেজিষ্ট্রেশন ও পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে উপজেলার রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত ২রা নভেম্বর উপজেলার শাঁখাড়ীপাড়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে জেডিসির প্রথম পরীক্ষা দিতে আসেন আজিজ। বিষয়টি জেনেও পরীক্ষা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে পরীক্ষা চলাকালীন ওই কেন্দ্রে গিয়ে কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে সতর্ক করেন নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। ঘটনার পাঁচ দিন পর গতকাল(৬ই নভেম্বর) পরীক্ষাকেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ‘অনধিকার প্রবেশ’ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় উপজেলা প্রশাসন। আজ বৃহষ্পতিবার(৭ই নভেম্বর) নোটিশের জবাব দেন তিনি। তবে আজিজের রেজিস্ট্রশনকারী প্রতিষ্ঠান রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে এখনও কোন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিস।
এ ঘটনায় শাঁখাড়ীপাড়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশনকারী প্রতিষ্ঠান রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে, রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী পরীক্ষার্থী আজিজকে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনের দাবী করেছে।
জানা যায়, আজিজ রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার একডালা গ্রামের দবীর উদ্দীনের ছেলে। জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিতে আজিজ পাশ্ববর্তী নলডাঙ্গা উপজেলার রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে চলতি বছর রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। জেডিসির এডমিট কার্ডে আজিজের বয়স জন্ম তারিখ ২০০৭ সালের ১ লা ডিসেম্বর। জন্ম তারিখ অনুযায়ী আজিজের বর্তমান বয়স ১১ বছর ১১ মাস। জেডিসি পরীক্ষার নীতিমালা অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থীর বয়স হবে ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। কিন্ত আজিজের প্রকৃত বয়স এর চেয়ে অনেক বেশি। বয়স গোপন করে তাকে জেডিসি পরীক্ষা দিতে সুযোগ করে দিয়েছেন রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রার সুপার মহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে শাঁখাড়ীপাড়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জানান, গত ২রা নভেম্বর পরীক্ষা শুরুর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ আমার অনুমতি না নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ১১১ নম্বর কক্ষে যান। ফিরে এসে তিনি আমাকে জানান, একজন মাঝ বয়সী চাপ দাঁড়িয়ালা ব্যক্তি বয়স গোপন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছেন। তবে ওই কক্ষে গিয়ে আমি ওই পরীক্ষার্থীকে খুঁজে পাইনি। আমি জানতে পারি ওই পরীক্ষার্থীর নাম আজিজ। আমি যাওয়ার আগেই সে পালিয়ে গেছে বলে অন্য পরীক্ষার্থীরা জানায়। কেন্দ্র হিসেবে আমরা বোর্ড প্রেরিত তালিকা অনুযায়ী পরীক্ষার ব্যবস্থা করি শুধু। এই জালিয়াতির দায় রেজিস্ট্রেশনকারী মাদ্রাসার।’
রেজিস্ট্রেশনকারী প্রতিষ্ঠান রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা সুপার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজিজ এই মাদ্রাসার শিক্ষক ফজলুল হকের মাধ্যমে আমার কাছে আসে। জন্ম সনদ দেখে আজিজকে ভর্তি করানো হয় এবং জেডিসি পরীক্ষার রেজিষ্টেশনের সুযোগ পায় সে।’ তবে যে জন্ম সনদের কপি দিয়ে আজিজ ভর্তি হয়েছে তা দেখতে চাইলে সুপার মহিদুল ইসলাম দেখাতে পারেনি।
পরে তিনি বলেন, ‘আজিজ প্রদর্শিত জন্মসনদ যাচাই করা হয় নি। আজিজ সনদ জালিয়াতি করতে পারে। আজিজের শারীরিক গড়ন দেখে তার প্রকৃত বয়স ৩০ এর উপরে বলে মনে হয়।’
আজিজকে মাদ্রাসায় আনা শিক্ষক ফজলুল হকের সাথে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাড়া পাওয়া যায়নি।
নলডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার আবদুল্লাহ আনছারী জানান, আজিজের বিষয়টি আমরা জেনেছি। যেহেতু এখন পরীক্ষা চলছে তাই পরীক্ষা শেষ হলে ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকলে রামশা কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার জেডিসি পরীক্ষার্থীদের বসার পরিবেশ ঠিক আছে কি না, তা দেখতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করি। পরে একজন পরীক্ষার্থীকে সন্দেহ হলে কেন্দ্র সচিবকে জানাই। তবে সে ভুয়া পরীক্ষার্থী ছিলো, যা সে পালিয়ে প্রমাণ করেছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব-আল-রাব্বি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান কিভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলেন, সে বিষয়ে কেন্দ্র সচিবের নিকট ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে। বয়স জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেয়ার লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।