জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সদর॥
নাটোর শহরে চলছে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সংখ্যক অটোরিক্সা। অটোরিক্সার চাপে এমনিতেই শহরে সৃষ্টি হয় যানজট। ঈদ আসন্ন তাই শহরে প্রতিদিন ঢুকছে বিপুলসংখ্যক অটোরিকশা। ফলে শহর ধুঁকছে দুঃসহ অটোজটে। শহরের মধ্যদিয়ে যাওয়া সড়কটিতে ডিভাইডার দ্বারা যান চলাচলের জন্য দুই লেনের করে দেয়া হলেও প্রতিটি সিঙ্গেল লেনেই তিনটি সারিতে চলছে অটোরিক্সা। ঈদ বাজারে এমন দুর্বিসহ যানজটে নাকাল শহরবাসী।
দেখা গেছে, প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের কানাইখালী, ছায়াবানী (ট্রাফিক) মোড়, বাটারগলি, মাদ্রাসামোড় স্টেশন বাজারের একতার মোড়সহ ব্যস্ততম রাস্তাঘাট অটোরিক্সার চাপে প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। শহরের মূল সড়ক ছেড়ে অটোরিক্সা চলাচল করছে পাড়া-মহল্লার সরু রাস্তা এবং অলিগলিতেও। এতে অটোজট হচ্ছে বাসাবাড়ির সামনেও।
শহরবাসী মনে করছে, আগে পায়ে চালিত রিকশা চলাচলে শহরে যানজট ছিল না। পরবর্তীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হওয়ায় বাড়তে শুরু করে যানজট। তবে নতুন করে দুই আসন বিশিষ্ট পায়ে চালিত রিকশায় ব্যাটারিচালিত ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন শুরু হওয়ায় শহরে নতুন করে যানজটের উপদ্রব সৃষ্টি হয়েছে।
অটোরিক্সা চালকদের দেয়া তথ্যে নাটোর শহরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এছাড়া দুই আসনবিশিষ্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে প্রায় ১ হাজার। প্রকৃতপক্ষে এরও কয়েকগুণ বেশি রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করছে শহরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরে চলাচলকারী রিকশা ও অটোরিকশা দাঁড়ানোর জন্য বেশ কেয়কটি স্ট্যান্ড আছে। তবু ট্রাফিক আইন অমান্য করে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা এবং পার্কিং করছে যানবাহনগুলো। আর এতেই দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠায় শহরের বাটার গলি, স্টেশন বাজার, হাসপাতাল রোড, পিলখানা, কাপুড়িয়াপট্টি, নীচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি ব্যস্ততম এলাকার সড়কগুলো গভীর রাত পর্যন্ত যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে। বেলা বাড়লে সহজেই কেউ নীচাবাজার থেকে বাটার গলি হয়ে পিলখানা বা কাপুরিয়াপট্টি যেতে পারছেন না। বিশেষ করে শহরের ছায়াবাণী মোড় ও কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেটের সামনে অসহনীয় অটোজট দেখা দিচ্ছে।
শহরের কানাইখালীর বাসিন্দা আনিসুল ইসলাম বলেন, কানাইখালী থেকে পিলখানা পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের পথ পেরুতেই সময় লাগছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এসব এলাকায় পায়ে হাঁটার কোনো জো নেই। আবার রাস্তার পাশে ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলার কারণেও ফায়ার সার্ভিসের বিপরীত দিক দিয়ে কাপুড়িয়াপট্টি অথবা লালবাজার হয়ে পিলখানা পৌছানো সম্ভব না।গ নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা যাতায়াত না করলে যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে তিনি মনে করেন।
ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, দোকানের সামনে সব সময় অটোর জট। ক্রেতা আসার সুযোগ নেই। ব্যবসা উঠছে লাটে। অটোর জটে মার্কেটে আসা ক্রেতারাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন। অনুমোদনের চেয়েও বেশি অটোরিকশা চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অটোচালকদের অভিযোগ, শহরে অটোজটের মূল কারণ বাইরের উপজেলাগুলো থেকে অটোরিক্সা শহরে প্রবেশ। কেউ এটি রুখতে পারছে না। একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত বাইরের অটোরিক্সার চলাচল সীমিত করার পরিবর্তে নামসর্বস্ব সমিতির নামে কয়েকজন ব্যক্তি কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিদিন চাঁদা তুলছে ১০ থেকে ২০ টাকা করে। শহরের কোন অটোরিক্সা বাইরে যেতে চাইলেও গুণতে হয় সমপরিমাণ টাকা। টাকা না দিলে কোনভাবেই চলতে দেয়া হয় না অটোরিক্সা।
অটোরিক্সার যথেচ্ছা লাইসেন্স প্রদান সম্পর্কে জানতে নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায় নি। তবে জানা গেছে, মেয়রের হস্তক্ষেপে অটোরিক্সা থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় বন্ধ হবার পর থেকে অটোরিক্সার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাটোর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, ঈদকে ঘিরে শহরে অটোজট কমাতে ট্রাফিক জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৩ জন ট্রাফিক পুলিশ ও ১০ জন আমর্ড পুলিশ সদস্য শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। মার্কেটগুলোর সামনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানকার পুলিশ সদস্যরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছেন। সবাই মিলে চেষ্টা করছেন যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।