নাটোর অফিস॥
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও দলটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়ে বিএনপি-জামাত ঘাপটি মেরে আছে। নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে তারা আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে। সময় এসেছে, বাছাই করে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামাতকে দল থেকে ছাঁটাই করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে এনে জায়গা করে দেয়া। তিনি নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, ‘বিগত ১০ বছরে দেশব্যপী দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। এতো উন্নয়ন সত্বেও কেনো দলে বিএনপি-জামাতকে নিতে হবে?’
শনিবার(১৯শে অক্টোবর) বিকেলে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা।
বিএনপি-জামাতকে ‘অশুভ শক্তি’ মন্তব্য করে নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে তারা। কোনদিন তারা আবারো রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিনাশ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে তা যেন না হয়, সেজন্য দলকে ঠিক করতে হবে।
আওয়ামী লীগ করে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যাওয়া নেতাদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে আওয়ামী লীগে কারা জন্ম নিচ্ছে আর কারা লালিত-পালিত হচ্ছে। নিজেদের ভুল ত্রুটি শুধরে মানুষের কাছে ফিরে যেতে হবে। মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে আওয়ামী লীগের প্রিয়ভাজন হওয়া যাবে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘গর্বের যুবলীগও এখন ক্যাসিনো আক্রান্ত। দল ক্ষমতায় থাকলে নেতারা অহংকারী আর কর্মীরা অসহায় হয়ে যায়। ক্ষমতার দম্ভ থাকে না। মনে রাখতে হবে, অনেক বেদনা ধারণ করেই আজকের আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। এই আওয়ামী লীগের ভিত্তি ওই নির্যাতিত কর্মীরাই যারা দুর্দিনে জীবন দেন দলের জন্য। দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক রেষারেষি ও অশুভ প্রতিযোগিতা পরিহার করে গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করতে হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজনীতিকে ‘সমঝোতা শিল্প’ মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপিকে সহ্য করে দলে আনতে পারলে, তাকে মেনে নিতে পারলে, কেন দলের কর্মীরা পরস্পরকে সহ্য করতে পারছেন না?’ বিএনপির অবস্থা খারাপ নয়। তাদের খারাপটা দেখা যায় না, যায় আমাদেরটা, কারণ আমরা ক্ষমতায়। দলের দুঃসময় ভুললে চলবে না। দলের শক্তি পুলিশ-র্যাব নয়, দুঃসময়ের কর্মীরা। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সক্রিয় ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তথ্য নিচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকে তাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। দলের পক্ষে প্রচার সৃষ্টি ও দলের বিপক্ষে অপপ্রচার প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে দলকেন্দ্রিক রাজনীতির ধারা চালু করতে হবে। এজন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ নেতাকর্মীদের দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে। দল শক্তিশালী থাকলে কেনো আঘাত আসতে পারবে না।
কেন্দ্রিয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছি যা এখন থামানো উচিত। শুদ্ধি অভিযান দলের জন্য চরম লজ্জাজনক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর শেখ হাসিনার আশা শেষ হতে দেবেন না।’
কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আবরার হত্যাকান্ডকে ইস্যু করে জামাত-শিবির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে বিবৃতি আদায় করেছে। তারা আরেকটি লাশের অপেক্ষায় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় তাদের সে প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। তাই ত্যাগীরা অভিমান করে ঘরে বসে থাকবেন না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখুন।
কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু সাংসদদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ভিত্তি কি তা সম্পর্কে অবগত হবার পরও যারা নিজেদের সংশোধন করছেন না, তাদের জন্য দু”সংবাদ অপেক্ষা করছে। নাটোর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালামকে ছোট্ট একটা ভুলের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বর্তমান সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল সতর্ক হয়ে যান, হয়তো আপনার জন্য এর চেয়ে খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির সঞ্চালনায় জেলায় দলের ৭টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভার সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে একজন করে বক্তব্য রাখেন।
সভায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অন্তভূক্ত করে প্রয়োজনে গোপন ব্যালটে প্রতিটি ইউনিয়নে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচনের নির্দেশ দেন কেন্দ্রিয় নেতারা।