নাটোর অফিস॥
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একাল-সেকাল নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন রাকসুর সাবেক জিএস, নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। এ নিয়ে তিনি তার ফেইসবুক একাউন্টে স্মৃতিচারণ করেছেন।
ফেসবুক থেকে তার স্ট্যাটাসটি নিম্নে তুলে ধরা হল:-
‘ইদানিং ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আলোচনা,পর্যালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি, মারামারি, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অব্যাহতি সহ সর্বশেষ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার কে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পর থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সারা দেশেই অনেক আলোচনা ও পর্যালোচনা চলছে। আমি নিজেও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ সংগঠন করেছি। আমি স্কুলজীবনে নাইন,টেন এ পড়ার সময় আব্দুলপুর কলেজের ছাত্রদের সাথে মিটিং,মিছিলে যেতাম। জয় বাংলা স্লোগান দিতাম।
কলেজ জীবনেও ছাত্র রাজনীতি করেছি। বিশেষ করে মনে পড়ে ৭৫ এর পনেরোই আগস্ট ভোরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মম ভাবে নিহত হওয়ার সংবাদ যখন শুনেছিলাম তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই ছিলাম এবং দেখেছিলাম সেই ভোর রাতের মধ্যে বেশিভাগ ছাত্রলীগ নেতাই(বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত যে সকল ছাত্রলীগ নেতার পেছনে শতশত কর্মী হাটতো) হল ছেড়ে পালিয়ে ছিলো। খেলাধুলায় ভালো হওয়ার সুবাদে আমি নওয়াব আব্দুল লতিফ হলে প্রথম বর্ষেই ছিট পেয়েছিলাম এবং হলের রেসিডেন্ট ছাত্র হিসেব থাকার সৌভাগ্য হয়ে ছিলো। আমাদের ছাত্র রাজনীতি একজন সৎ, নিবেদিত ব্যক্তিত্ব বজলুর রহমান ছানা ভাই, যিনি পরবর্তীতে বিচারপতি থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তার পাশে রুমেই আমি থাকতাম।
আমি ফুটবল খেলায় ভালো ছিলাম, বিভিন্ন খেলায় অংশ গ্রহন করলে সে সময় বিশ টাকা থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যত পাইতাম। যখন সে সময় আমাদের ১৫ দিনের মিল খরচ ছিলো ৪৮ টাকা। এক টাকা, দেড় টাকা খরচ হতো সকালের নাস্তায়। সে সময় দেশে সামরিক শাসনের মধ্যেই(জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়) অনেক সময়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতো পরিচয় গোপন রেখেই কাজ করতো। হল কমিটি সহ বিভিন্ন কমিটি হতো। ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতারা বেশির ভাগ সময়ই ছানা ভাইয়ের রুমেই থাকতো। মনে পড়ে বহুবার আমি ফুটবল খেলা অংশগ্রহণ করে পাওয়া টাকা ছানা ভাইয়ের হাতে দিয়ে দিয়েছি ছাত্রনেতাদের ডাইনিংয়ের খবার খরচের জন্য।
তখন আমরা এক একটা প্রোগ্রাম খুব কষ্ট করে সফল করতাম।২১ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরের রেলীতে যাবার জন্য,শহীদ মিনারে যাবার জন্য খুব ভোর কষ্ট করে রুম রুমে গিয়ে সবাই ডেকে ঘুম থেকে জাগাতাম।আমরা ছাত্রলীগের নেতারা সবাই যে যা পারে(এক টাকা,দুই টাকা) চাঁদা তুলে আমরা প্রোগ্রাম করতাম।।মনে পড়ে কলা ভবনের সামনে কিম্বা সাইন্স বিল্ডিংয়ের সামনে কতবার ছাত্রদলের নেতারা এসে আমাদের মিছিল বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। কিন্তু আমরা চুপচাপ থাকতাম, নিরবে দাঁড়িয়ে থাকতাম।একদিন দুইদিন পর আবার আমরা আমাদের ঠিকই আমাদের প্রোগ্রাম করতাম। আমরা তখন আমাদের এই ধরনের সহনীয়,নমনীয় আচারনের জন্যে সে সময় যথেষ্ট প্রশংসাও পেয়েছি। যখন রাকসু নির্বাচন হলো তখন ছানা ভাইয়ের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আওয়ামীলীগের অনেক বড় নেতার বাড়িতে গিয়েছিলাম, ছাত্রলীগের প্যানেলের পক্ষে থেকে আমরা পোষ্টার করার টাকার জন্য আমাদের কত কষ্ট করতে হয়েছিলো। আমাদের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ২৮০০ টাকা কাগজের দাম দিয়েছিলেন, আর বাংলার বানী থেকে পোষ্টার ছাপিয়ে দিয়েছিলেন বিনা পয়সায় এ ছাড়া রাকসুর নির্বাচনের জন্যএ আমরা সবাই নিজেরাই টাকা তুলে খরচ করেছিলাম এবং ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলাম।যা সে সময় সারা দেশেই ব্যাপক আলোড়ন তুলে ছিলো
আজকাল ছাত্রলীগ নেতারা উন্নয়ন কাজের চাঁদাবাজি করে। আমরা নির্বাচিত ছাত্রলীগ নেতা ছিলাম, কিন্তু কোনদিনও তো আমরা চাঁদাবাজির কথা চিন্তা পর্যন্ত করি নাই। মনে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একবার সংঘর্ষের মধ্যে রাজশাহী স্টেডিয়ামের কাজের কিছু রড (ছোট ছোট পিচ করে কাঁটা) ছাত্ররা নাকি হাতে হাতে নিয়ে গিয়েছে এই রকম অভিযোগ ভিসি স্যারের কাছে ও আমাদের কাছে আসলে বাদশা ভাই, রানা ভাই,আমি সহ সব রাকসুর নেতারা মাফ চেয়েছিলাম ছাত্রদের পক্ষ থেকে। ভাবতেই অবাক লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের সময়ে রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু রড ছাত্ররা হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলো এমন অভিযোগ আসলে আমরা সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আর এখন ছাত্রলীগ নেতারা নাকি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাঁদাবাজি করে। সে সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য যারা আসতো তাদেরকে রাতে ছিটে ঘুমাতে দিতাম আর আমরা ছাত্রলীগ নেতারা রুমে ফ্লোরিং করতাম যেনো সেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্ররা তাদের পরিবারের কাছে বলতে পারে যে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের থেকে, ছাত্রলীগের ছেলেদের কাছ থেকে আরা আন্তরিক সহযোগিতা পেছে। আর ইদানিং যখন বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছিট নিয়ে মারামারি চাঁদাবাজির সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা শুনি,সংবাদ শুনি তখন বড়ই কষ্ট লাগে।
৭৫এর পরে আমরা কখনো ভাবি নাই যে আমরা ক্ষমতায় আসবো।কিন্তু তবুও আমরা সে সময় সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগঠন করেছি, মিছিল করেছি, সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, জেল খেটেছি। এমন কি মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে যাবৎজীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত কাঁধে নিয়েছি কিন্তু তবুও কোন কিছুর লোভে কোনো দাসখত দিই নাই। আমরা সেই সময় নীতি আদর্শকে বুকে ধারণ করেই ছাত্রলীগের সংগঠন করেছি। আমরা সে সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষক সমাজের সামনে ও সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আমাদের নিজেদের ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছিলাম জন্যই আমরা রাকসুর নির্বাচনে জয় লাভ করতে পেরেছিলাম।
জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকে আমরা তার নেতৃত্বেই কাজ করেছি। মিথ্যা মামলায় আমাদের যাবৎজীবন কারাদন্ড হলে তিনি আমাদের মুক্তির জন্য কথা বলেছিলেন।’
(চলবে)