নাটোর অফিসঃ
নাটোরের সিংড়ার রাখালগাছা বাজারের যাত্রী ছাউনী দখল করে গুদাম ঘর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মিনহাজ উদ্দিন সরদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রায় ৩ বছর ধরে যাত্রী ছাউনীটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। এতে করে শিক্ষাথর্ী সহ পথচারীদের রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গত তিন বছর ধরে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান এমন অভিযোগকে মিথ্যা প্রপাকান্ডা বলে দাবী করেছেন।
এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ৯নং তাজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রাখালগাছা গ্রামটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বড় গ্রাম। উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে এই গ্রামে এক যুগ আগে বাজার তৈরি হয়। পাশাপাশি এখানে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ। এছাড়া এটি সিংড়া ও আত্রাই থানার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক লোকের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক । তাই রোদ ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ এর অর্থায়নে দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই “রাখালগাছা বাজার যাত্রী ছাউনী” নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নিমার্নের কয়েক মাস পরেই ছাউনীর চতুরদিকে ইটের প্রাচীর তুলে গুদাম ঘর বানিয়ে তালা দিয়ে রাখা হয়। এরপর থেকেই ভোগান্তিতে পড়ে স্থানীয় বাজারের জনসাধারণ সহ স্কুল- মাদ্রসার শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন সরদার যাত্রি ছাউনিটিকে গুদাম ঘর বানিয়ে দখলে রেখেছেন। ছাউনীটি প্রায় ৩ বছর ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন দখল করে ব্যবহার করছেন। আর তার বাড়ির কৃষাণ রুবেল হোসেনের দায়িত্বে রয়েছে ছাউনীটি। সরকারী দলের শীর্ষ পযার্য়ের নেতা হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা। তারা দ্রুতই যাত্রী ছাউনীটি দখল মুক্ত করে মানুষের ব্যবহারের জন্য উনমুক্ত করার দাবি জানান ।
৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলী বলেন, যাত্রী ছাউনীটি উদ্বোধনের পর বাজারের জনসাধারণ বসে গল্প-গুজব করতো। রোদ-বৃষ্টিতে অনেকেই বিশ্রাম নিত। আবার মাঝে মাঝে এখানেই গ্রামের সালিশ-দরবার করা হতো। কিন্তু সেটি এখন তালাবদ্ধ থাকে। কে তালা দিয়ে রেখেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ এটা আমার কাছ থেকে নাইবা শুনলেন।
অপরদিকে বর্তমান পরিষদের ইউপি সদস্য নাজমুল হকের যোগাযোগ করা হলে তিনি যাত্রী ছাউনী তালা দিয়ে রাখা হয়েছে বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কে বা কারা রেখেছেন এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
পাশবর্তী ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা আহসান হাবিব বলেন, যাত্রী ছাউনী তালা দিয়ে রাখা হয়েছে এটা ঠিক। তবে কে দিয়েছে এটা বলা কঠিন। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই ছাউনী সেবা কেন্দ্র বা আশ্রয়স্থল। ঝড়-বৃষ্টি হলে জনগণ এখানেই তো আশ্রয় নিবে। এটা বন্ধ রাখায় জনগণের সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন,মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন,তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে এমন মিথ্যা রটনা রটানো হচ্ছে। তিনি বলেন এলজিএসপি-২ এর অর্থায়নে শুধুমাত্র পিলার ও ছাউনি নিমার্ন করে দেয়া হয়। স্থানটি উন্মুক্ত থাকায় গবাদি পশু রেখে নোংরা করা হচ্ছিল। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি প্রাচীর মহ দরজা জানালা নিমার্ন করে দেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন লোক ঘরটি ব্যবহার করছে। তাদের কেউ কেউ ঘরটিতে ধান রাখতে পারে। বষার্ মৌসুম হওয়ায় অনেকেই ঘরটিতে ধান রেখেছেন বলে জেনেছেন। হাটের দিন ওই ঘর থেকে ধানগুলি বের করে হাটে তোলা হয়। চেয়ারম্যান ক্ষুদ্ধস্বরে বলেন তিনি আবাদ করে বছরে প্রায় দুই হাজার মন ধান পান। সেই ধান রাখার মত তার পযার্প্ত ব্যবস্থা রয়েছে। এই ঘরে একশ’ মন ধানও মজুদ রাখা কষ্টকর। একটি পক্ষ মিথ্যাচার করে তার সুনাম ক্ষুন্ন সহ রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই এমন প্রবাকান্ডা চালাচ্ছে। তিনি এখন ঢাকায় রয়েছেন। এলাকায় ফিরে ঘর খালি করার নির্দেশ দিবেন।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতোর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তার জানা নেই বলে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাটোরের ডিডিএলজি গোলাম রাব্বি সাংবাদিকদের বলেন,বিষয়টি তার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।