নাটোর অফিস॥
অসময়ের বৃষ্টিতে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে চর অধ্যুষিত নাটোরের লালপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নীচু এলাকা ও বিভিন্ন শতকালীন আগাম ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া চর এলাকায় আবাদকৃত নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের অন্যুন ৪০ একর জমির আখ পানিতে তলিয়েছে। এতে ২২.২৫ হেক্টর জমির ফসলহানির পর ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেইট খোলায় আতঙ্কিত কৃষকরা।
প্লাবিত হওয়া ইউনিয়নগুলো হলো লালপুরের ঈশ্বরদী, বিলমাড়িয়া ও লালপুর সদর ইউনিয়নের একাংশ। তবে তীর রক্ষায় ইতোমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লালপুর সদর ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৩রা অক্টোবরের মধ্যে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে পদ্মাতীর সংলগ্ন আরো বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে লালপুরের নওশেরা, সুলতানপুর, দিয়ার, শঙ্করপুর, চাকলা বিনোদপুর, আরাজি বাকনই, রসুলপুর, বাকনাই, বন্দোবস্তগোবিন্দপুর ও লালপুর চরের শীতকালীন আগাম সবজির ২২.২৫ হেক্টর ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে আগম চাষ করা হয়েছিল মূলা, পুইশাক, লালশাক, বেগুন, লাউসহ অনান্য সবজি।
আকস্মিকভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ঘটনায় চর ও অল্প কিছু লোকালয় প্লাবিত হলেও ফারাক্কা বাঁধের শতাধিক গেইট খুলে দেয়ার ফলে পদ্মায় পানি বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে লালপুরবাসীর মধ্যে।
বিলমাড়িয়া এলাকার মূলা চাষী জুবায়ের আলী জানান, ‘পদ্মার পানিতে তার ৮ বিঘা জমির মূলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’
একই এলাকার চাষী রেজাউল ও সুজা মন্ডল বলেন, তাদের ১২ বিঘা জমিতে শীতকালীন বেগুন একরাতের ব্যবধানে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কিছু পরিণত বেগুন সংগ্রহ করা গেলেও অধিকাংশ বেগুনগুলোই ভেসে গেছে।
নওসারা চরের কৃষক আব্বাস আলী নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের চুক্তিবদ্ধ আখচাষী। তিনি জানান, পদ্মার পানি তার ২৭ বিঘা আখের জমিতে প্রবেশ করেছে। আশা করেছিলাম পানি দ্রুত নেমে গেলে কিছু আখ সংগ্রহ করা যাবে। কিন্ত পানি নামার কোন লক্ষণ নেই। উল্টো ফারাক্কার পানি প্রবেশ করলে কোনভাবেই অবশিষ্ট আখ আহরণ করা যাবে না।
বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, শুধু বিলমারিয়ার ৭ থেকে ৮টি চরে আবাদ করে কয়েকহাজার চরের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। পানি বৃদ্ধিতে চরের আবাদ তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহযোগিতার একান্তই প্রয়োজন।
ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে পদ্মাতীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলানো অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এই ইউনিয়নজুড়ে চরের একটি বড় অংশ থাকায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ফসলের ক্ষেতে বৃদ্ধি পাওয়া পানি কমার প্রত্যাশা করছি। তবে আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় কৃষকরা আতঙ্কিত। স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করার কাজ চলছে।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আল আসাদ জানান, পদ্মার নিকটবর্তী তিনটি পয়েন্টের ( রাজশাহী পয়েন্ট, চারঘাট টয়েন্ট ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ) মধ্যে রাজশাহী পয়েন্টকে ভিত্তি ধরে পানির যে বিপদসীমা পরিমাপ করা হয় সে অনুযায়ী আগামী ৩রা অক্টোবর বিপদসীমা অতিক্রম করে লালপুর প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। পদ্মাবিধৌত ইউনিয়নগুলো প্রথমে ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বেশী গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তীরের এলাকাগুলোতে সাড়ে ৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেয়া হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, পানি বৃদ্ধিতে সংঘটিত ফসলহানি নিরুপন করা হবে। সেই সাথে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় পানি বৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি প্রতিমুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে সরকারী সহযোগিতা পায় সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।