আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ভূমিহীন উম্মেহানি বেগম (৫৭) বিপদে পড়ে নাজিরপুর গ্রামীণ ব্যাংক, মৌখাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, মৌখাড়া ঠেঙ্গামারা, গ্রাম্য মহাজন হেলেনা ও কোহিনুরসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ ও চড়া সুদে টাকা নেন। তার মাথায় এখন ৪ লাখ টাকার ঋণের বোঝা।
মহারাজপুর গ্রামের সোলায়মান আলীর পুকুরপাড়ে ছাপরা ঘরে থাকেন উম্মেহানি। স্বামী জাকারিয়া ৩০ বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর অসুস্থ ও অক্ষম হয়ে তার কাছে ফিরে এসেছেন। বেকার স্বামীকে নিয়ে সংসার চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজের অসুখের কারণে দিনমজুরের কাজও করতে পারছেনা উম্মেহানি। কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে যা আয় হয় তাতে তার সংসার চলেনা। ওষুধও কিনতে পারেন না। কোনো উপায় না দেখে নিজের কিডনি বিক্রির জন্য বিভিন্নজনের দ্বারে ধরনা দিয়েও ব্যর্থ হন তিনি।
জানা যায়, আয় বাড়ানোর জন্য নিজের বাড়িতেই বয়লার মুরগীর খামার করেছিলেন উম্মেহানি। কিন্তু তাতেও লোকসান গুনতে হয়। শেষ সম্বল তার ৫টি ছাগলও নিয়ে গেছেন ৫ হাজার টাকার পাওনাদার আরিফ হোসেন। একমাত্র ছেলে হারিস উদ্দিনকে কর্মসংস্থানের জন্য ২ লাখ টাকা ঋণ করে একটি মোটরসাইকেল ও মোবাইলফোন কিনে দিলে সে ঢাকায় গিয়ে মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রীবহন করে। মেয়ে জুলিয়াকেও ৩০ হাজার টাকা ঋণ করে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন উম্মেহানি। তার পায়ে ঘা হয়ে পঁচন ধরায় ঢাকায় চিকিৎসার জন্য দেড়লাখ টাকা খরচ হয়। এসব খরচের টাকা জোগাতে গিয়ে ছেলের আয়ের পথ মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকায় বন্ধক রাখার পরও এনজিও থেকে ঋণ করতে হয় তাকে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসে পুনরায় আরেকটি এনজিও থেকে ঋণ করে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন।
ঋণে জর্জরিত উম্মেহানি দুঃখ করে বলেন, এত মানুষের কিডনি বিক্রির খবর পাওয়া যায় অথচ আমার কিডনি কেউ নিচ্ছে না। ‘আমি এখন কি করব আল্লারে’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।#