নাটোরে ‘মেম্বারের কথাই আইন’

নাটোর
নাটোরের সিংড়ায় জমি নিয়ে সংঘর্ষে বড়ভাই আলমগীর হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ কৃষক পরিবারের দেড়শ’ বিঘা জমি চাষাবাদে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ছোট ভাই ইউপি সদস্য কামাল হোসেন। তার হুমকির মুখে অভিযুক্তরা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। নিজ জমিতে চাষাবাদ করতে না পারায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার। তবে কামাল হোসেন দম্ভের সাথে বলেছেন, ‘গ্রামে আমাদের নির্দেশই আইন’। তার সাথে সুর মিলিয়ে গ্রাম প্রধানদেরও দাবী, গ্রামের ‘গুটি কয়েক’ কৃষকের সামান্য জমি চাষাবাদ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত সামাজিক ভাবেই নেয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের ছোট বাঁশবাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেনের সাথে স্থানীয় মৃত তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী উভয় পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কামাল হোসেনের বড় ভাই আলমগীর হোসেন নিহত হন। আলমগীর হত্যা মামলায় তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলে সহ ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ ঘটনার জেরে তমিজ উদ্দিনের ছয় ছেলের বাড়ি ঘরে লুটপাট করে তাদের গ্রাম ছাড়া করে কামালের সমর্থকরা। অভিযুক্ত তমিজ উদ্দিন ৬ ছেলে জামিনে বেড়িয়ে এলেও তাদের এলাকায় ঢুকতে দেয়নি কামালের সমর্থকরা। বর্তমানে গ্রামের বাইরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন ৬ ছেলে ও তাদের পরিবারগুলোর সদস্যরা। এছাড়া ৬ ভাইয়ের প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে চাষাবাদে স্থানীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বোরো ও আমন মৌসুমে চাষ করতে পারেননি তারা। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানালেও প্রতিকার পাচ্ছেননা।

এদিকে রোববার সরেজমিন ছোট বাঁশবাড়িয়া এলাকায় এলাকায় গিয়ে ৬ কৃষকের বাড়িতে লুটপাটের চিহ্ন দেখা যায়। তবে ঘটনা জানতে চাওয়া হলে কামাল ও তার সমর্থকদের ভয়ে কেউ কথা বলতে চাননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, আলমগীর হত্যা মামলায় মোট ৩৬ জন আসামী থাকলেও ঘটনার পর থেকে কামাল মেম্বারের লোকজন তমিজ উদ্দিনের ছেলেদের গ্রামে ফিরতে দিচ্ছে না। তবে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অন্য আসামীরা গ্রামে ফিরেছে। উল্টো কামাল মেম্বার তার সমর্থক গ্রাম প্রধানদের দিয়ে তমিজের ছেলেদের বিরুদ্ধে কবরস্থানের জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন।

স্থানীয় গ্রাম প্রধান মিজানুর রহমান ও ফোরকান আলীর বলেন, গ্রামের গুটি কয়েক কৃষকের সামান্য জমি চাষাবাদ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত সামাজিক ভাবেই নেয়া হয়েছে। এটা কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ ওই কৃষকেরা কবরস্থানের সোয়া বিঘা জমি দখল করে রেখেছে। এই জমি না ছেড়ে দিলে তাদেরকে ধানী জমিতে যেতে দেয়া হবে না।

তমিজ মিয়ার ছেলে ভুক্তভোগী কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, মেম্বার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাড়িতে চালিয়ে হয় তান্ডব-লুটপাট। লুটে নেয়া হয়েছে ৯টি শ্যালো মেশিন, মোটর ও পুকুরের মাছ। গত দুই মৌসুম ধরে অনাবাদী রয়েছে বিলের দেড়শ বিঘা ধানী জমি।

আরেক ভুক্তভোগী কৃষক লাবু মিয়ার স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, কামাল মেম্বারের তান্ডবে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তাদের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের লোকদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। তারা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আরেক ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম বলেন, জমিতে চাষ করতে না পেরে গত ২৭ আগস্ট প্রতিকারের জন্য সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও পুলিশ সুপারের কাছে আবদন করি আমরা। আবেদনের প্রায় একমাস পার হতে চললেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কামালের তৈরী আইনের কাছ পুলিশ প্রশাসনও অসহায়।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত ছিলেন না। তবে তিনি খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান ।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন,আবেদনটি তার নজরে আসেনি। তবে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হয়েও একজন ইউপি সদস্য নিজস্ব কোন আইন প্রচলন বা চর্চা করতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *