আশিকুর রহমান টুটুল, লালপুর
দেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতের স্থান নাটোরের লালপুরে বৃষ্টি নেই প্রায় এক মাস। বৃষ্টির অভাবে তাই এবার কপাল পুড়েছে রোপা আমন চাষীদের। চারা রোপণের সময় কিছুটা হলেও এখন নেই বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও। ফলে উপজেলার প্রায় ৭হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হতে শুরু করেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ। হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক সম্পূরক সেচ দিলেও অধিকাংশ কৃষক সেচের অভাবে ফসলহানির আশংকা করছেন। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ এবং লক্ষমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে ধান চাষীদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে।
সম্প্রতি উপজেলার চকনাজিরপুর, ওয়ালিয়া, মুরদাহবিল, দুয়াড়িয়া, দুরদুরিয়া, বরমহাটি, বড়ময়নাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে আমনের মাঠ। চৌচির হয়ে গেছে ধানক্ষেত। কোন কোন জমির ধান বিবর্ণ রংধারণ করেছে। ক্ষেতের কিছু অংশে ধান একেবারে চিটা হয়ে গেছে।
ধানচাষীরা এমন পরিস্থিতর জন্য মূলত প্রকৃতির বৈরী আচরণকেই দুষছেন। তাদের মতে, দেশের উষ্ণতম এ স্থানে প্রতিবছর বৃষ্টিপাত কম হলেও মোটামুটি ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্ত এবারের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন।
ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ধানচাষী আশিকুর রহমান জানান, তিনি ঈদের আগে বৃষ্টির পানিতে প্রস্তত জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন। এর পর থেকে আর বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ধানে মাজরা সহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ বেড়েছে।
মামুনুর রশীদ নামের তিলকপুর গ্রামের আরেক চাষী জানান, বৃষ্টির অভাবে সেচ দিয়েও তেমন উপকার হচ্ছে না। ধান ঘরে তোলার কোন উপায় দেখছি না।
ছোটাময়না গ্রামের আকতারুজামান বলেন, ‘অনাবৃষ্টিতে সৃষ্ট তীব্র খরায় ধানী জমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ধান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে দুইদিন পর পর বিঘা প্রতি ৬শ টাকায় সম্পূরক সেচ দিচ্ছি।’
হাবিবুর রহমান, সাদ্দাম হোসেনসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে ধান গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। এবছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতেই ধান রোপণে বিলম্ব হয়েছে। তার উপর অনাবৃষ্টি লক্ষ্যমাত্র অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, লালপুর কম বৃষ্টিপাতের স্থান। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে কিছু জমির শুকিয়ে গেছে। কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনাবৃষ্টি নি:সন্দেহে আবাদের লক্ষ্যমাত্র হ্রাস করবে।