নাইমুর রহমান, নাটোরঃ একের পর এক বের হচ্ছে নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদালয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকদের খোঁজ। এতে যারপানাই বিব্রত হচ্ছেন অনান্য শিক্ষকরা। নিপীড়ক সহকর্মীর জন্য পদেপদে লজ্জিত হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম গ্রেফতার হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে শিক্ষক কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা। বছরখানেক আগে সাবেক এক ছাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া বর্তমানে কর্মরত এক শিক্ষকের নিপীড়নের ঘটনা ফেসবুকে উঠে এলে বেরিয়ে আসে ওই শিক্ষকের কুকীর্তি।
আলোচিত ওই শিক্ষকের নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি গণিতের শিক্ষক। এই শিক্ষকের সাথে স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রীর ফেসবুক কথোপকথন এসেছে জাগোনাটোর২৪.কমের নিকট। এর সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বের করা হয়েছে গত ৩দিনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা যা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ২৬শে আগস্ট তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম। এ সংবাদ ওইদিন বিকেল থেকে জাগোনাটোর২৪.কমসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর ভাইরাল হয়। নাটোর থেকে প্রকাশিত অনলাইন নাটোরটোয়েন্টিফোর.কমের ফেসবুক পেইজের কমেন্টে শহরের লালবাজার এলাকায় বসবাসকারী স্কুলের সাবেক এক ছাত্রী তার এক সহপাঠীকে শিক্ষক সাইফুল কর্তৃক নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ওই ছাত্রীকে ফেসবুকের মন্তব্য প্রত্যাহারে হুমকি দেন। রাজী না হলে মন্তব্যকারী ওই তরুণীর বাড়িতে চলে এসে তাকে হুমকি দেন। তরুণী ভীত হয়ে মন্তব্যটি প্রত্যাহার করেন পুরো বিষয়টি তার এক ভাইকে জানান। সেলফোনে ওই ভাই সাইফুলের সাথে কথা বলে উল্টো তরুণীকে দেখে নেবার কথা বলে তার বাড়িতে আসেন। ততক্ষণে মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়টি না জেনে তরুণীর বাড়িতে সাইফুল জানতে পারেন তরুণীর ভাই শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে ভীত হয় ক্ষমা চান শিক্ষক সাইফুল। স্থানীয়রা বিষয়টি জানার পর ওই রাতেই লালবাজার এলাকায় সাইফুলকে গণপিটুনি দেন।
পরদিন সাইফুলের সাথে তরুণীর সহপাঠীর ফেসবুক কথোপকথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাতে কথোপকথনের চৌকস অংশ পৌছায় জাগোনাটোর২৪.কমের নিকট।
কথোপকথনে শিক্ষক সাইফুল ওই ছাত্রীকে সরাসরি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এর জন্য তার স্ত্রীকে সে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ারও কথা বলে। সাইফুল জানায়, ছাত্রীটিকে পাবার জন্য তার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এজন্য ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবিও চান তিনি।
গত ২৬শে আগস্ট রাতে লালবাজারের ঘটনায় ২৮শে আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ে সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসেন ফেসবুকে মন্তব্যকারী সেই তরুণীর পরিবার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন সাইফুলকে অভিযোগের ব্যাপারে জেরা করলে প্রথমে অস্বীকার করেন সাইফুল। পরে কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট দেখালে হাত-পা ধরে ক্ষমা চান সাইফুল।
এ ঘটনা জানার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুলকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়।
শিক্ষক সাইফুলের বিরুদ্ধে রহস্যজনকভাবে এখন আর অভিযোগ করতে রাজী নন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। তবে সে যখন কথোপকথনের স্ক্রীণশর্ট তার সহপাঠীকে দেয় তখন অভিযোগ করার ইচ্ছাপোষণ করেছিল বলে জানিয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। জানা গেছে, এ ঘটনার পর সাইফুলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ হবে না। তবে ‘ছড়িয়ে পড়া’ অভিযোগের তদন্ত সাইফুলের ‘সহকর্মী’ শিক্ষকদের দিয়ে করানো হবে।
নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায়’ সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সতর্ক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তড়িত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের এমন ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন শুরুতে অভিযোগের ‘তেমনটা জানেন না’ বলে জানালেও পরে স্বীকার করেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুলের বক্তব্য নিতে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।