নাটোরঃ ওদের বয়স ১৯ থেকে ২৬। সদ্য কৈশরকাল অতিক্রম করা কয়েকজন এই বয়সেই জড়িয়ে পড়েছে দস্যুতাসহ ছিনতাইয়ের সাথে। শুধু সাধারণ ছিনতাই নয়। ওদের চাই মোটা অংকের টাকা ছিনতাই। টাকার নেশায় ওরা তৈরি করে টিনএজ গ্যাং। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা চলতি বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা ছিনতাই করে ফিল্মি কায়দায়। টাকা ছিনতাইয়ের জন্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওরা ওৎ পেতে থাকে মহাসড়কে। কাজ শেষে দ্রæত সটকে পড়ার দায়িত্বে মোটর সাইকেল নিয়ে নিয়োজিত থাকে গ্যাংয়ের অন্য একাধিক সদস্য। নিজ এলাকায় তারা ভদ্র ছেলে হলেও এলাকার বাইরে পরিচিত ‘টিনএজ গ্যাং’ হিসেবে। তবে পুলিশের জালে আটকাতে এদের বেশি সময় লাগেনি। সম্প্রতি এই গ্যাংয়ের ৪ সদস্য দস্যুতা মামলায় পুলিশের জালে ধরা খেয়েছে। নিয়োজিত সোর্সের দেয়া সুত্র ধরে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দের নিষিদ্ধ পল্লী থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এদের দু’জন। পরে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর দুই জনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এই ‘টিনএজ গ্যাংয়ের চার সদস্য হলো নাটোরের সিংড়া উপজেলার নাসিয়ারকান্দি গ্রামের মৃত ওয়াজি উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন (১৯),একই এলাকার ময়েন উদ্দিনের ছেলে শ্রামল আলী (২৫) ,গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্র নগর গ্রামের মজনু মোল্লার ছেলে আজাদুল (২৬) ও সাবগাড়ি গ্রামের সামাদ সরদারের ছেলে আনাস আলী (২০)। এদের আটকের সময় উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৯ হাজার টাকা, ছিনতাইকাজে ব্রবহৃত মোটর সাইকেল ও ১টি চাপাতি। দস্যুতা মামলায় গ্রেফতারের পর ওই চারজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দুস্যতার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এই তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, দস্যুতা মামলার ওই ৪ আসামীকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূরক জবানবন্দী শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, গত ২০ আগস্ট গুরুদাসপুর ব্র্যাক ব্যাংকের খুবজীপুর শাখার ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন ও হিসাব কর্মকর্তা জেয়াহেরুল হক মানিক মোটরসাইকেলযোগে উপজেলার চাঁচকৈড় জনতা ব্যাংক শাখায় টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন। পথে আনন্দনগর এলাকায় মুখোশ পরিহিত তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে এসে তাদের পথ রোধ করে চাপাতি দ্বারা উপর্যুপরি কুপয়ে তাদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানায় মামলা হলে পুলিশ অভিযানে নামে। অভিযানের এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৪ আগস্ট রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আনাস আলী ও শ্যামল আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে একই এলাকা থেকে ২৫ আগস্ট আজাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা সহ ছিনতাইকৃত ২ লাখ ৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদকালে গ্রেফতারকৃত আনাস ও আজাদুল এক পর্যায়ে স্বীকার করে যে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রæয়ারী তারা একই উপজেলার জ্ঞানদানর গ্রামে প্রাণ ডেইরি হাবে টাকা দিতে যাওয়ার সময় গুরুদাসপুর শাখার দুইজন কর্মচারীকে চাপাতি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ৫লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৬ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার সময় তাদের সাথে শুভ ও নাসির জড়িত ছিল। পরে নাসির উদ্দিনকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে সেও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রকাশ্যে এসব ঘটনা ঘটিয়ে এলাকা থেকে সটকে পড়ে। তাদের সরিয়ে নিতে শুভ মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলের অদুরে অপেক্ষা করতে থাকে।
পুলিশ সুপার লিটন সাহা আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত আজাদুলের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুরের জালাল হত্যা মামলা রয়েছে। অন্যদের মধ্যে আনাস আলীর বিরুদ্ধে মহিষ চুরি সহ ছিনতাইেয়ের মামলা আছে। তবে এদের মধ্যে নাসির নামে একজন মানবিক ও বিবেকের দংশনে দংষিত হচ্ছিল। বিবেকের কারনে গ্যাং থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এসব অপকর্ম থেকে সরে আসতে পারেনি। শুভ নামে এই গ্যংয়ের অপর এক সদস্য যে ছিনতাইয়ের পর মোটর সাইকেলে করে অন্যদের নিরাপদ স্থানে রেখে আসতো তাকে এখনও ধরা যায়নি। আশা করা হচ্ছে সে অচিরেই ধরা পড়বে। নাটোর ,গুরুদাসপুর থানা ওডিবি পুলিশ সহ রাজবাড়ি থানার পুলিশ এসব অভিযানে অংশ নেয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরাম হোসন,সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আবুল হাসনাত,সহকারী পুলিশ সুপার সিংড়া সার্কেল জামিল আক্তার, ওসি ডিবি সৈকত ,গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।