নাটোরঃ নাটোর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত হালিত বিল। বিলের মাঝখানে রয়েছে একটি সাবমার্সিবল (ডুবন্ত) সড়ক। এই বিল বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রের আকার ধারন করে। এসময় বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে সড়কের দুই তীরে। এসময় বিলের ভিতরের গ্রামগুলো দূর থেকে দ্বীপের মতো মনে হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিতে নাটোরের মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিলের পাটুল ঘাটে বিনোদন পিপাসুদের ঢল নেমেছে। দুর-দুরান্ত থেকে আসা নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার মানুষ নির্মল প্রাকৃতিক বিনোদনের জন্য ছুটে আসছেন এখানে। এখানে তারা কক্সবাজারের আমেজ উপভোগ করছেন। দর্শনার্থীদের ভীড়ের কারণে বিলগ্রামের মানুষদের যাতায়ায়াতের বিড়ম্বনাসহ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এরপরও তাদের এলাকায় বিপুল দর্শনার্থীদের আগমনে তারা খুশি। এতদসত্বেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাবসহ যাত্রী ছাউনির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের। হালতি বিলের এই এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার দাবী দর্শনার্থীসহ স্থানীয়দের।
বাংলাদেশের বিশালায়তনের চলনবিলের একাংশ এই হালতি বিল। বর্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বিলতে দেখতে আসে হাজার হাজার দর্শনার্থী। তাদের জন্য গত কয়েক বছর আগে পাটুল ঘাট থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ডুবন্ত সড়ক। বর্ষায় সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সড়কগুলো দিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল করে। এই ডুবন্ত সড়ক নির্মানের পর থেকে ভ্রমণপিপাসুরা বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এই পাটুল ঘাট এলাকায় আসেন। এখানে এসে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে আকৃষ্ট হন দর্শনার্থীরা। নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে স্থানীয়রাও প্রায় প্রতিদিন আসেন এখানে। তবে এবার বর্ষার শুরুতেই পানিতে ডুবে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মৃত্যুতে স্থানীয় সুবিধাভোগীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর জেলা প্রশাসন হালতিবিলের নৌকা মাঝিদের মাঝে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করায় নৌকা ভ্রমনকারী দর্শনার্থীদের মাঝে ভীতিভাব কেটে গেছে। ঈদুল আযহার দিন থেকে মানুষের ঢল নামতে দেখে খুশী হলেও মানুষের ভীরে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিলাঞ্চলের মানুষদের।
বিল ডোবা দ্বীপগ্রাম খোলাবাড়িয়ায় মাকে সাথে নিয়ে নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে বিপাকে পড়েন বগুড়ার মৌসুম খাতুন। তিনি জানান, বুধবার বেলা ১১টা থেকে পাটুল ঘাটে অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। কিন্ত দর্শনার্থীদের চাপে বিল পারাপারের জন্য নৌকা না পেয়ে ঘাটেই অপক্ষো করতে হয় কয়েকঘন্টা। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব, রেজা ও ইকবাল জানান,এখানকার নৈসর্গিক সৌর্ন্দয্যে বেশ আনন্দ সহ কক্সবাজারের আমেজ অনুভব করেছেন তারা। তবে এবার অনান্যবারের তুলনায় বিলভ্রমনে নৌকার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। নৌকার মাঝি আবদুল লতিফ ও শাহ আলম বলেন, এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। দর্শনার্থীদের চেয়ে নৌকার সংখ্যাও কম। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নৌকা চালাতে হচ্ছে। যারা দিনভর সমগ্র বিল ঘুরছেন তাদের নিকট থেকে কিছু টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সমাজসেবক আকতার হোসেন বলেন, বিলের মধ্যে ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকেই এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানকার দিনমজুররা এখন বছরের অর্ধেক সময় চাষাবাদ এবং বাকী সময় নৌকা বেয়ে ভালোমতেই জীবনযাপন করছে। অনেকেই বিল পাড়ে দোকান-পসরা বসিয়ে বাড়তি আয় করছে। জেলা পরিষদ সদস্য রইস উদ্দিন রুবেল বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় এই হালতি বিল এলাকায় অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে দাবী জানানো হয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু বরাদ্দ প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, হালতি বিলের পাটুল ঘাট এলাকাকে পর্যটন সুবিধার আওতায় আনতে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এবারই প্রথম দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারী উদ্দ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।