নবীউর রহমান পিপলু॥ কবি জীবনানন্দ দাশের কালজয়ী কবিতা ‘বনলতা সেন’র রহস্যময়ী চরিত্র বনলতা সেনের কারনেই নাটোরের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। নাটোর বলতেই বনলতা সেনের নাম অপরিহার্যভাবে সামনে আসে। বনলতা আর নাটোরের হাজার বছরের মিতালী যেন শুধু কাব্যের থরে-বিথরেই সাজানো থেকে গেল। বাস্তবে বনলতা নাটোরের হলো না।
বলছি সাম্প্রতিকালে রাজশাহী থেকে চালু হওয়া ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ নামের আন্ত:নগর ননস্টপ ট্রেনটির কথা। বনলতা এক্সপ্রেস নাটোর ছুঁয়ে চলে যায় কিন্ত থামে না। ট্রেনটি শুরুতে রাজশাহী থেকে চালু হলেও এলাকার মানুষদের দাবীর মুখে তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকার উদ্যেশ্যে। সেই সাথে নন স্টপ ট্রেনটি এখন রাজশাহী স্টেশনেও দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীর জন্য ঈদুল আযহার উপহার হিসেবে ট্রেনটি বর্ধিত করেছেন। কেবল বাইপাস লাইন না থাকায় শুধু বনলতা সেনের নাটোর ছুঁয়ে যাচ্ছে না বনলতা। যেদিন থেকে বনলতা চলতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই নাটোরের মানুষদের হৃদয় স্পন্দন স্থবির হয়ে গেছে। বনলতা নামে প্রতি সুবিচার করা হলেও সুবিধা থেকে বঞ্ছিত করা হয়েছে নাটোরের মানুষদের।
এ নিয়ে নাটোরের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আক্ষেপ তৈরী হয়েছে যে বনলতা সেনের কারনে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে নাটোর, সেই বনলতা ট্রেনটি নাটোরে স্টপেজ নেই।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও বিশিষ্ট চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি ঢাকায় রেল পথেই নিয়মিত যাতায়াত করেন। ননস্টপ ট্রেন ‘বনলতা’ চালু হওয়ার খবরে দারুণ খুশি হয়েছিলেন। নাটোরের কোথাও স্টপেজ না থাকার বিষয়টি শোনার পর সে খুশি উবে গেছে।
সাবেক অধ্যক্ষ মইন উদ্দীন আহমেদ বলেন, বনলতা নামে যেখানে নাটোর বিশ্বব্যাপী পরিচিত, সেই নাটোরে বনলতা দাঁড়াবেনা তা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
নাটোর জর্জকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মিলন রহমান বলেন, রাজশাহী থেকে নাটোর জেলা সদরের স্টেশন পর্যন্ত লাইন সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে নাটোরে বনলতা এক্সপ্রেসের স্টপেজ দাবী করছি।
স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রান্তজন সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিম বলেন, নাটোরের আজকের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন কার্পণ্য করেননি। এবারও নাটোরবাসীর প্রাণের এ দাবী মেনে নিয়ে তিনি এখানে বনলতা এক্সপ্রেসের স্টপেজের জন্য রেলওয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেবেন। আমরা আশা নিয়ে সে অপেক্ষায় আছি।
স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, বনলতা ট্রেনটি চালু হওয়ার পর থেকে ধরে নিয়েছি ,আমাদের বনলতা চিরতরে আমাদের ছেড়ে রাজশাহীতে পাড়ি দিয়েছে। বনলতা কবে নাগাদ নাটোর ছুয়ে যাবে সেই অপেক্ষাতে রয়েছি।
নাটোর রেল স্টেশনের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাষ্টার রেজাউল করিম বলেন, বনলতা ট্রেনটি নাটোর স্টেশন থেমে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। রাজশাহী থেকে নতুন করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথে নতুন লাইন বসিয়ে নাটোরের সাথে সংযোগ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে। এই লাইন নির্মান করা হলে রাজশাহী আব্দুলপুর লাইনে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যাবে। তবে অবশ্যই ডবল লাইন হতে হবে। অন্যথায় নাটোরের অব্দুলপুর স্টেশনে বনলতা ট্রেনের স্টপেজ দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও আব্দুলপুর জংশন স্টেশনকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
নাটোরের স্টেশন মাষ্টার অশোক কুমার চক্রবর্তী বলেন, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন ননস্টপ ট্রেন। ট্রেনটি রাজশাহী থেকে নাটোর রেল স্টেশন ছুয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। ট্রেনটি জেলার মধ্যে আব্দুলপুর স্টেশন হয়ে যায়। তবে ওই স্টেশনের কোন স্টপেজ দেওয়ারও সম্ভাবনাও কম। লাইনগুলি ডবল লাইন করা হলে রেল পথের আমুল পরিবর্তন হবে।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, বনলতা এক্সপ্রেসের স্টপেজ না থাকায় আমরা বঞ্চিত হচ্ছি ট্রেনেটির যাত্রি হওয়া থেকে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহিদুল ইসলাম দুলাল বলেন, চাইলেও এখন বনলতা এক্সপ্রেসের স্টপেজ দেয়া সম্ভব নয় কেননা তা উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সরকার বিবেচনা করলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সেয়া হবে।