নাটোরঃ নাটোরের সিংড়ার উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সোনাপুর পমগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবারও সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গত দু’দিন ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালীন সময়ে ৬টি সাপ মেরেছে। সাপের উপদ্রবের কারনে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও রয়েছেন আতংকে।
গত বছর প্রায় একই সময়ে স্কুলটিতে সাপের উপদ্রব দেখা দেয়। সে সময় শ্রেণিকক্ষের ভেতরে, বাইরে, বারান্দায়, টেবিল-বেঞ্চের নীচে এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের বই পুস্তকের ভিতর থেকে আচমকাই বের হতে দেখা যায় ছোট-বড় বিষধর সাপ। ওই সময় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তায় হাতে লাঠি তুলে নেয়। মারতে সক্ষম হয় ২০টির অধিক সাপ। কর্তৃপক্ষকে ক্লাস নিতে হয় স্কুল ভবনের বারান্দায়। এবারও একমাত্র প্রাক প্রাথমিক ক্লাস রুম থেকেই ৫ টি সাপ মারা হয়। ফলে বারান্দায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের মনে সাপ আতংক ভর করায় আতংকে অনেকেই বাড়ি চলে যায়।
সোমবার খবর পেয়ে সরেজমিন গেলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে লাঠি নিয়ে সাপের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্কুল চত্বরের জঙ্গলে অথবা বাতাসে বই পুস্তক নড়ে ওঠলেই ওই শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে ছুটে যায় সেদিকে। লাঠি নিয়ে পাহারারত পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আসিফ হোসেন, আকাশ আলী ও সিফাত রহমান জানায় তারা স্কুলে এসে সাপ দেখে। তারা প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী কক্ষ থেকে পাঁটি সাপ মেরেছে। গত বছরও তারা অনেক সাপ মেরেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানায়,তারা এখন ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে। ব্রেঞ্চিতে পা উঠিয়ে বসে ক্লাস করছে।
এদিকে স্কুল ভবনে আবারও সাপের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের ছুটে যান স্কুলে। অভিভাবকদের কেউ কেউ সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ি নিয়ে যান। ফলে বিপাকে পড়েন স্কুলের শিক্ষকসহ কর্তৃপক্ষ।
জিতেন্দ্রনাথ দাস নামে এক অভিভাবক জানান, তিনি স্কুলে সাপের উপদ্রবের কথা শুনে স্কুলে ছুটে এসেছেন। যে সব সাপ মারা পড়েছে সবগুলোই বিষধর ও বিষাক্ত সাপ। তবে সেগুলো বাচ্চা সাপ। সাপের মা কোথাও লুকিয়ে রয়েছে। সুযোগ পেলে কাউকে না কাউকে কামড়ে দিবে। তাই সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে এখন কোন শিশুই নিরাপদ নয়।
সহকারী শিক্ষক শিরিনা সুলতানা জানান, ‘সাপের উপদ্রবে আমরা চিন্তিত। সাপের কারণে শিশুদেরও মনে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এই স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি শতভাগ। সাপ আতঙ্ক ভর করেছে শিশুদের মাঝে। গত বছর সাপের উপদ্রবে শিশুরা বেশ কিছুদিন স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রমজান আলী বলেন, গত বছর থেকে এই সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। সাপ তাড়ানোর ঔষধ ছিটিয়েও আতংক কাটাতে সময় লেগেছে। এবারও নতুন করে সাপের উপদ্রব শুরু হওয়ায় হয়ত শিশুদের উপস্থিতি কমে যাবে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন গত বছরও এই একই সময়ে সাপ ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়। এবার রোববার একটি সাপ মারা হয়। সোমবার প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী কক্ষ থেকে ৫ টি সাপ মারা হয়। সাপের উপদ্রব দেখে অনেকেই আতংকে তাদের সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যান। এই সাপের উপদ্রবের বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। তিনি সাপ তাড়ানোর ঔষধ ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
সিংড়া উপজেলা সহাকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের মাদ্যমে বিষয়টি তিনি অবগত হওয়ার পর সাপ তাড়ানোর ঔষধ ছিটানোর পরামর্ম দেওয়া হয়। এছাড়া শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য যে কোন সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নিতে পারেন বলে বলেছেন। তবে সাপের উপদ্রবের বিষয়টি তার উর্দতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন বলে জানান তিনি।