নাটোর অফিস॥ বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের দিনগুলোতে নাটোরের রাজপথ মিছিল-শ্লোগানে প্রকম্পিত করা আওয়ামী যুবলীগ ১৯ বছর ধরে চলছে কমিটি ছাড়া। দলীয় অঙ্গীকার পূরণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচীতে মাঠে সবার আগে সক্রিয় থেকে হামলা,মামলা, অপহরণ এমনকি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে নাটোর যুবলীগের নেতাকর্মীরা। অথচ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী রাজনীতির সবচেয়ে সক্রিয় এ অঙ্গ সংগঠন নিয়ে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা খেলেছেন ক্ষমতায় থাকা স্থানীয় নেতারা। নির্বাচিত নেতৃত্ব ছাড়াই চলা গত যুবলীগের অবস্থা আরো করুণ উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে। ফলে অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে হতাশা প্রকাশ করছেন দুঃসময়ের ত্যাগী অনেক কর্মী-সমর্থক। এ সুযোগে সংগঠনে অনুপ্রবেশ করছে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী হাইব্রিড ও বিভিন্ন দলত্যাগী কর্মীরা। তাদের দাপটে কোণঠাসা দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতৃত্ব।
শুধু অভ্যন্তরীণ বিরোধেই নাটোরে গত সাত বছরে নিহত হয়েছেন ৭ যুবলীগ নেতা-কর্মী। এলাকায় আধিপত্য, নেতৃত্বে অসম প্রতিযোগিতা, পূর্ব বিরোধসহ নানা কারণে এসব হত্যাকান্ড ঘটছে বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেলা যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ সংগঠনের নেতাদের একের পর এক হত্যাকান্ডে চিন্তিত। সাবেক নেতাদের মতে, জেলা ও উপজেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় ও কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা দ্বিধান্বিত। আর বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবী, সংগঠনের মধ্যে কোন অভ্যন্তররীণ বিরোধ নেই।
তবে দলে অনুপ্রবেশকারীরাই এলাকার আধিপত্য নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এমন অবস্থাতেও জেলা যুবলীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দের দাবী, সংগঠন এখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচিত নেতৃত্ব না থাকায় এখানে নেই কোন বিরোধ। বিশেষ কোন চাওয়া পাওয়াও নেই তাদের। তাই সম্মেলন না হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে না দলীয় কর্মসূচী পালনের ওপর।
দলীয় সুত্রে জানা যায়,১৯৯৮ সালে নাটোর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ডেলিগেটরদের সরসরি ভোটে সংগঠনের নেতা নির্বাচন করা হয়। নির্বাচনে বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান সভাপতি নির্বাচিত হলেও সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ও প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বর্তমানে জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ায় কমিটি ঘোষণা স্থগিত হয়। প্রায় দুই বছর পর ২০০০ সালে শফিকুল ইসলাম শিমুলকে সাধারন সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রিয় যুবলীগ। পরবর্তীতে শফিকুল ইসলাম শিমুল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং শরিফুল ইসলাম রমজান ১ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদ দুটি শুন্য হয়। এছাড়া দীর্ঘ সময়ে সংগঠনের আরো অনেকে নেতা মূল দলে জায়গা করে নেয়ায় পদগুলি শুন্য রয়েছে। ফলে প্রায় শুন্য গোয়াল নিয়েই চলছে যুবলীগের কার্যক্রম। পরে কমিটির সহ সভাপতি বাশিরুর রহমান খান এহিয়া চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লবকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করে কেন্দ্রিয় কমিটি। সংগঠনকে গতিশীল করতে উপজেলা ও পৌর কমিটি সকল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সংগঠনের নেতা কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সংগঠনের কার্যক্রমে কোন গতি নেই।
নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সায়েম হোসেন উজ্জল বলেন, তিনি সংগঠনের সম্মেলন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন। কিন্তু জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের কোন নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা বা তদারকি না থাকায় সংগঠনে সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নাটোর পৌরসভার পরপর দুইবারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তারুল ইসলাম আলম ছেড়ে বলেন, সফলভাবে জেলায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়ার পর যুবলীগের নেতৃত্বে আসার ইচ্ছা ছিল। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা নেতৃবৃন্দ কর্তৃক যুবলীগের নেতৃত্বে আনার শর্তে নৌকা প্রকীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছিলাম। এখন প্রতিশ্রুতি থেকে তারা সরে এসেছেন।
জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, যুবলীগের বর্তমান কমিটিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় এবং কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা দ্বিধান্বিত। দ্রুত সম্মেলন আয়োজনর দাবী করেন তিনি।
জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) বাশিরুর রহমান খান এহিয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব বলেন, কেন্দ্রিয় নির্দেশে তারা ইতোমধ্যে জেলার ৫২ টি ইউনিয়নের সবকটি,৭ উপজেলার ৫টি এবং ১০ পৌরসভার ৭টি সম্মেলন করে কমিটি করে দিয়েছেন। উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততার জন্য অন্যগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন বিরোধ নেই।