নাইমুর রহমান, নলডাঙ্গা ঘুরে
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। ২০১৪ সালের সেই ভোটে ফ্যাক্টর ছিল স্থানীয় রাজনীতি। তাই রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলেও তখন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বিএনপি-জামাত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা। তবে এবার দ্বিতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানকার ভোটারদের কাছে অবকাঠামোগত উন্নয়নই ফ্যাক্টর। ভোটাররা বলছেন, এবার এলাকার স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চান।
২০১১ সালের ১১ই ডিসেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোরে একটি শোকসভায় যোগ দিয়ে নলডাঙ্গাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যান। ২০১৩ সালে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির (নিকার) বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নলডাঙ্গা উপজেলা। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়ন ও বরাদ্দ বঞ্চিত হয় এই উপজেলা। সবশেষ ২০১৭ সালের শেষদিকে সরকারের সুনজরে একাধিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনসহ ২০১৮ সালের প্রথম থেকে দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। সেগুলোর মধ্য উল্লেখযোগ্য হল- উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, মিনি স্টেডিয়াম, প্রাণি সম্পদ অফিস, পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস, খাদ্য গুদাম, ফায়ার সার্ভিস প্রভৃতি।
দেরীতে হলেও সরকারের সুদৃষ্টি পড়েছে নলডাঙ্গা উপজেলার উপর। তাই উপজেলা ভোটে জনগণের রায় উন্নয়নের পক্ষে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। সেদিক থেকে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ।
শুধু উন্নয়ন নয়, মাত্রায় কম হলেও এখানে প্রভাব রয়েছে স্থানীয় রাজনীতির। এর মূল কারণ হল বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়ি নলডাঙ্গার রামশার কাজীপুর গ্রামে। সেই সূত্রে দলের জন্মলগ্ন থেকেই এখানে শক্ত ঘাঁটি বিএনপির। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর উপস্থিতি ছাড়াই বিএনপি-জামাতের প্রার্থীরা বিজয়ী হয় এখানে। আর এবার ঈদ-উল-ফিতরের আগে নলডাঙ্গায় এসে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছেন যদিও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী। দুলুর তৎপরতার কারণে এবার পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
নির্বাচনে দলীয় কোন প্রার্থী না থাকায় প্রকাশ্যে আলোচনায় নেই জামায়াতে ইসলামী। প্রথম নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া নির্বাচিত হলেও এবার দলীয় সিদ্ধান্তহীনতায় তিনি মনোনয়ন কেনেন নি। এছাড়া বিএনপির পক্ষে স্থানীয় জামাত নেতা-কর্মীদের প্রচারণাতেও নামতে দেখা যায়নি। তবে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত আসতে পারলে স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন এগিয়ে থাকবেন ভোটের হিসেবে, এমন ধারণা অনেকের।
এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন অনিক ও শ্যামা। তারা জানান, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাময়িক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন যে প্রার্থী, তাকেই প্রথম ভোটটি দিতে চান তারা।
পৌর এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম ও মৎস্য চাষী রুবেল আলী বলেন, নলডাঙ্গার সম্ভাবনাময় কৃষি ও হালতি বিলের মাছ নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। কৃষক ও মৎস্য চাষীদের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হবে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের নলডাঙ্গা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সালমান রহমান বলেন, একসময়ের অবহেলিত এ জনপদে এখন ধীরে ধীরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। রাস্তাঘাট সংস্কারসহ বিদ্যুৎ সুবিধা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে পৌছেছে যা আগে ছিল না। আমরা এবার স্থানীয় উন্নয়নের প্রশ্ন সামনে রেখেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই।
নলডাঙ্গা বারনই শিশু সংগঠনের সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে এবার আগের চেয়ে সোচ্চার নলডাঙ্গার মানুষ। তাদের সুবিবেচনাপ্রসূত রায় যে প্রার্থীর দিকে যাবে, নিঃসন্দেহে তার দায়িত্ব বেড়ে যাবে নির্বাচনের পর।
পাঁচ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নলডাঙ্গার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ প্রায় দেড় বছর ধরে। এখানে দুধ সরবরাহকারী বাসুদেবপুর সমবায় সমিতির সভাপতি কালিদাস রায় ও চৌমুহনী ভোলারহাট সমবায় সমিতির সভাপতি মানিক চন্দ্র সরকার আশা প্রকাশ করে বলেন, যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন, তিনি যেন শত শত খামারীর উপার্জনের বিষয়টি বিবেচনা করে অচল দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রটি সচলের ব্যবস্থা করেন।