নবীউর রহমান পিপলু ও নাইমুর রহমান, নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক ঘুরে
ঈদ-উল-ফিতর সমাগত। এবার তাই ঘরমুখে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে রমজানের শুরু থেকেই নাটোরের চারটি মহাসড়কের দুইটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এর অন্যতম উত্তরাঞ্চলের আরেকটি প্রবেশদ্বার নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক। ঈদের ১০দিন আগে সড়কের সব ধরণের সংস্কার কাজ শেষ করতে জেলা প্রশাসন সময় বেধে দিলেও কাজের ধীরগতিতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। ফলে এবার চিরাচরিত দুর্ভোগ ‘মহাদুর্ভোগে’ রুপ নেবে বলে মনে করছে এই মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
প্রায় অসম্ভব হলেও ঈদের আগেই অধিকাংশ সড়ক সংস্কারের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় সড়ক বিভাগ।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, নাটোর-ঢাকা(বনপাড়া-হাটিকুমরুল) মহাসড়কের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে গুরুদাসপুর কাছিকাটা এলাকার আত্রাই টোল প্লাজা সংলগ্ন কিছু সড়ক খানাখন্দে পরিণত থাকায় তা রমজানের শুরুতেই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩২ কিলোমিটার নাটোর-বগুড়া মহাড়কের ১৪ কিলোমিটার খানাখন্দ সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য প্রায় ১৮ কোটি টাকায় বরাদ্দ রয়েছে।
সরেজমিন এ মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নাটোর অংশের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার এখনও খানাখন্দ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে নাটোর শহরের মাদ্রাসামোড় থেকে সড়কে খননযজ্ঞ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে কয়েকশ’ হাত দূরে বগুড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। ক’দিন আগে শুরু হওয়া উত্তরাঞ্চলগামী বাসগুলোর এই স্টপেজের দুইপাশের সড়ক প্রসস্তকরণ কাজ ঈদের আগে দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ চালক ও যাত্রীদের। এছাড়া বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় সড়কের কাঁচা অংশটুকুও কাদায় পরিণত হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সিংড়া উপজেলার শেরকোল ব্রীজ থেকে সিংড়া বাজার পর্যন্ত থেমে থেমে সড়কের খানাখন্দ সংস্কার কাজ কয়েকমাস ধরে চলছে। এ পথের যানবাহনের চালকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটি এক্সক্যাভেটর ও একটি রোলার মেশিন দিয়ে ঢিমেতালে চলা রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ঈদের আগেও তা শেষ হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এছাড়া একই সড়কের চৌগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে জামতলী বাজার পর্যন্ত সড়কের বড় একটা অংশ খানাখন্দে পরিণত থাকলেও এখানে কোন কাজ শুরু হয়নি এখনও।
কাজের ধীরগতি কাজের কারনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে উত্তরাঞ্চলগামী বাসগুলো চলাচলে দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়ে চলছে। খোদ যানবাহন চালকরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খানাখন্দ পেড়িয়ে চলতে গিয়ে যানবাহনগুলো বিকল হওয়ায়। এখন পর্যন্ত এ মহাসড়কের ৪ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হলেও কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে সকলেই দুর্ভোগ লাঘবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করার দাবী তাদের।
বাসচালক হাফিজুল ও আসলাম জানান, অপরিকল্পিত খোঁড়াখুড়িতে যান চলাচলে বিঘ্ন সহ প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কোনভাবেই দুর্ভোগ তাদের পিছু ছাড়ছে না।
মাইক্রোবাস চালক মনিরুল ইসলাম বলেন, এ পথে দিনদিন দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। রাস্তা সংস্কারের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ঘাটতির কারণে কচ্ছপগতিতে চলছে কাজ। বৃষ্টি এলে সড়কের দুর্ভোগে বেড়ে যায়।
নাটোর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম বলেন, সড়কের ভাঙ্গাচোরা অংশের উপরই কার্পেটিং করা হয়েছে। যেভাবে কাজ চলছে তাতে ঈদের আগে সড়ক সংস্কারের সম্ভাবনা খুব কম। যেটুকুও সংস্কার হয়েছে, তাও নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ হোসেন তালুকদার বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ঈদের আগেই ৭কিলোমিটার সংস্কার কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ঈদের আগেই সকল সড়কের সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হলেও এসব সড়ক-মহাসড়ক যাতায়াত উপযোগী করা হবে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, ঈদে সড়ক পথে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ঈদের আগেই সংস্কার কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।