নাইমুর রহমান,নাটোর ॥ নাটোর শহরের ব্যস্ততম ট্রাফিক মোড়ে ছায়াবানী হলের নীচে টাঙ্গানো একটি সাইনবোর্ডে দৃষ্টি নিবন্ধ সকলের। সাইনবোর্ডের দিকে যিনিই তাকাচ্ছেন, তার চোখেই বিস্ময়। সেখানে লেখা, ‘অপকর্ম রোধে অপকর্মের ব্যবহার, মাদক বিক্রেতার বাড়ি হবে গণশৌচাগার’, প্রচারে- নাটোরবাসী।’ চার রাস্তার এ মোড় দিয়ে শহরে কেনাকাটার কেন্দ্রস্থল পিলখানা, কাপুড়িয়াপট্টি ও লালবাজারে যেতে হয়। এই পথে এমন সাইনবোর্ডে মাদকের প্রতি চুড়ান্ত ঘৃণা ও বিক্রয়ের মতো অপকর্ম রোধে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িকে গণশৌচাগার তৈরীর কড়া হুমকি দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, এক বছর আগে সরকার দেশব্যপী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিল, তারই ফলশ্রুতিতে মানুষ এখন ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে জনমনে আস্থার সঞ্চার হয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের পাশাপাশি এবার মানুষও সচেতনতার সাথে নিজেদের দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
নাটোরের প্রেক্ষাপটে মাদক নির্মূলে এতোদিন শুধু অভিযানই পরিচালিত হয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নাটোরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন সাইফুল্লাহ আল মামুন। তবে তিনি বিশ্বাস করতেন, মাদক নির্মূলে সচেতনতার চেয়ে বড় অস্ত্র কিছু নেই। তাই সবার আগে তিনি জোর দেন ব্যক্তি সচেতনতা সৃষ্টিতে। তার নির্দেশে প্রথা ভেঙ্গে রাস্তায় নামে খোদ পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ ভ্যানে মাইক লাগিয়ে জেলার ৭টি উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেন মাদকবিরোধী বার্তা।
পুলিশ সুপারের এমন পরিকল্পনা সামান্য হলেও বাস্তবায়নের পথে, এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাটোরবাসী।
সমাজকর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঘৃণার উপর আর কোন প্রতিবাদ নেই। নাটোরবাসী মাদকের প্রতি সেই ঘৃণা প্রদর্শন করতে শুরু করেছে। দায়িত্বশীলরা এগিয়ে এলে এবার মাদকের বিরুদ্ধে সত্যিকারের সামাজিক আন্দোলন হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মাদকের কুফল নিয়ে বরাবরই সোচ্চার থাকেন নাটোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু। তিনি বলেন, প্রথমবার মাদকের বিরুদ্ধে নাটোরবাসীকে প্রকাশ্যে আওয়াজ তুলতে দেখলাম। এই বার্তা প্রতীকি হলেও ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের স্বার্থে, যাতে তারা অন্তত মাদককে ঘৃণা করতে শেখে।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কলামিস্ট রেজাউল করিম খান মাদকের প্রতি জনগণের ঘৃণা প্রদর্শনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, মাদক উদ্ধার বা আসামী গ্রেপ্তার যে মাদক নির্মূলে যথেষ্ট নয় তা পরিষ্কার। দরকার জনসচেতনতা যা তৈরী শুরু করেছে জেলা পুলিশ এবং ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রতিবাদ শুরু করেছে সাধারণ মানুষ।
জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানে এখন নাটোরের সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে অভিনব প্রচারণায়। আমি চেয়েছিলাম মানুষ ঘৃণা করতে শিখুক এবং সেই ঘৃণা ছড়িয়ে দিক সর্বত্র। মাদক এখানে পুরোপুরি নির্মূল না হলেও দুষ্প্রাপ্য হয়েছে আগের চেয়ে। কোন মাদক ব্যবসায়ী বা সেবনকারী যদি নিজের ভুল বুঝতে পারে, তবে পুলিশ তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।উল্লেখ্য, গত ৪ মাসে জেলায় ৫৬০ টি মাদক মামলা দায়ের করে পুলিশ। এসব মামলায় ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা মূল্যের ২২ হাজার পিস ইয়াবা, ৪৩২ বোতল ফেন্সিডিল, ২৫৪ লিটার চোলাই মদ, ৩১ কেজি গাঁজা, ৩০৮.৫১ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে। এসব অভিযান চলমান থাকা অবস্থায় ৮৮৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।