নাটোরে রিক্সাচালক জামাত আলীর দায়িত্ববোধ হার মানে না দুর্যোগেও

নাটোরঅফিস॥ নাটোর শহরের ব্যস্ততম কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেই ব্যস্ততার লেশমাত্র। রাস্তায় নেই গাড়ি, কাছেদূরে খোলা নেই একটি চায়ের দোকান পর্যন্ত। ঢ়ের প্রয়োজন ছাড়া রাস্তার বের হননি কেউই। অথচ অন্যদিনগুলোতে লোকারণ্য এ এলাকা মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকে মানুষের কোলাহলে।

রাত সাড়ে ১১টা বাজে। তখনও টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। প্রায় জনমানবহীন রাস্তায় এসে দাঁড়ালো একটি ফাঁকা রিক্সা। ফাঁকা জায়গায় রিক্সাটি দাঁড় করিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে ভেতরে চড়ে বসলেন চালক। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়েছেন তিনি। নাম জামাত আলী (৬০)। বাড়ী শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায়। দুর্যোগের এ রাতে নিত্যান্ত অভাববোধই নয়, দীর্ঘ দিনের অভ্যাস থেকেই বের হয়েছেন রিক্সাচালক জামাত আলী।

শুক্রবার(৩রা মে) নাটোরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় ঠিক দুপুরের পরপরই। আচমকা শুরু হয়ে থেমে থেমে হতে থাকে বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড় ফোনীর অনাকাঙ্খিত তান্ডবনৃত্যের আশঙ্কায় দুপুরেই ফাঁকা হতে থাকে শহর। রিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, দিনমজুর, চা-দোকানীসহ খেটে খাওয়া মানুষরাও তেমন প্রয়োজন ছাড়া বের হননি আর। এমন বাস্তবতায় শুধু কৌতুহল নিবারণের জন্য রিক্সাচালক জামাত আলীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

জামাত আলী রিক্সা চালান নব্বইয়ের দশক থেকে। শুধুই জীবিকার তাগিদে রিক্সা চালানো শুরু করলেও এখন তা পরিণত হয়েছে অনেকটাই অভ্যাস ও দায়িত্ববোধে। অন্য চালকদের মতো দিনে নয়, জামাত আলী রিক্সা নিয়ে বের হন রাতে। রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেয়া করেন তার রিক্সায়। সারারাত রিক্সা চালিয়ে আয় করেন দুই থেকে তিনশ’ টাকা। বছর পাঁচেক আগে কানাইখালী থেকে বাস কাউন্টারগুলো হরিশপুর টার্মিনালে স্থানান্তর হবার পর থেকে কমে গেছে আয়। তখন দিনরাত শহরের ভেতর দিয়ে বাস চলাচল করত বলে ভালোই উপার্জন করতেন তিনি। এখন উপার্জন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

প্রায় তিন দশক ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকটও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত জামাত আলী। রাতের যে কোন সময় জরুরী প্রয়োজনে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এলেই তাকে পাওয়া যায়। তাই রাতে স্থানীয় কারো সন্তান বা আত্নীয়-স্বজনের শহরে আসার কথা থাকলে তার উপর বাড়ি পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পরে। গভীর রাতে যাত্রীদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌছে দেন জামাত আলী।

জামাত আলী বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করে আমাকে। ভরসাও করে। তাই রাতে রিক্সা চালিয়ে গন্তব্যে পৌছে দিই তাদের। আজও একজন যাত্রী আনতে যাবো বাস টার্মিনাল এলাকায় রাতের কোন এক সময়। তবে বৃষ্টি হলে একটু কষ্ট হবে যা অন্যদিন হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়ে যায়। চাইনা যেন তেমন কিছু হউক।’

নাটোরের সিনিয়র সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু শুরু থেকেই চেনেন রিক্সাচালক জামাত আলীকে। তিনি বলেন, রাতের বেলায় যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌছে দিয়ে তিনি সততার সাথে জীবিকার্জন করছেন। জামাত আলীই তাদের সময়ের একজন, যিনি প্যাডেল মেরেই জীবন কাটিয়ে দিলেন।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *