সজল কুমার হোড়, গুরুদাসপুর॥
চারিদিকে ধুলি। ধুলির কারণে অনেকক্ষণ দেখা যায়না সামনের কিছু। নিঃশ্বাস নেয়া যেন দায়। এমন দূর্ভোগের উপর সড়কজুড়ে ছোট বড় গর্ত যেন মরার উপর খাড়ার ঘা! নতুন রাস্তার কার্পেটিংয়ের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
বর্ণনা দেয়া দৃশ্যটি দেখা যাবে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের মধ্যম পাড়া হতে চিৎলাপাড়া পর্যন্ত। এমন দুর্ভোগই নিত্যসঙ্গী। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক ধুঁকতে ধুঁকতে পার হতে হয় চালক ও পথচারীদের।
এমন অবর্ণনীয় ভোগান্তির কারণ সকলেরই জানা। খুব বেশি দিন নয়, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কসহ আরো তিনটি গ্রামীণ সড়ক মাস ছয়েক আগে পূর্ণ নির্মাণের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল। নবনির্মিত সড়ক দিয়ে অনান্য যানবাহনের চেয়ে দাপটের সাথে চলাচল করছে স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ধারণ ক্ষমতায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টর।
শুধু যে ওই তিনটি সড়কেরই এমন বেহাল অবস্থা তা নয়। গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে অন্তত ২০টিরও বেশি সড়কে এমন পরিস্থিতি চলছে।
গুরুদাসপুর পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী মো. সেলিম রেজা জানান, পৌর সদরের আদম আলী শাহ’র মোড় হতে গোপালের মোড়, ধারাবারিষা ইউনিয়নের হাজীর হাট চিতলাপাড়া দিয়ে আছিরের মোড় হয়ে মধ্যমপাড়া ব্রীজ পর্যন্ত এই তিনটি সড়ক সংস্কারের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যায় করা হয়েছে। কিন্তু মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচল করায় সড়কগুলো অস্তৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। একই কারনে পৌর সভার অন্য সড়কগুলো একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামীণ সড়ক ঘেঁষে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠেছে প্রায় ৭টি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে ট্র্যাক্টর ব্যবহার করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ধারণ ক্ষমতায় ইটভাটার মাটি বহন করায় সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধুলিময় সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের বেড়েছে দূর্ভোগ। এছাড়া উপজেলার চলনালী, খুবজিপুর, হাঁসমারি, মশিন্দা, ধারাবারিষা, নাজিরপুর, রওসনপুর, সোনাবাজুসহ অভ্যন্তরিণ গ্রামীণ সড়কগুলোরও কম বেশি একই অবস্থা।
উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার জানান, গুরুদাসপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ বছর খানেক আগে গ্রামের সড়কগুলো কার্পেটিং করা হয়েছিল। একদিকে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের হিরিক। অন্যদিকে সেসব মাটি ইটভাটাসহ অন্যত্র নিতে অধিক ধারন ক্ষমতার ট্রাক্টরের অবাধ বিচরণ। সব মিলিয়ে গ্রামের সড়কগুলোও বেহাল হয়ে পড়েছে। নতুন করে এসব সড়ক সংস্কারে ব্যায় হচ্ছে ৬০ কোটি টাকা।
উপজেলা এলজিইডি জানিয়েছে, যানবাহন চলাচলের জন্য গ্রামীণ সড়কগুলোর সর্বোচ্চ ধারন ক্ষমতা ৮-১০ টন। সেখানে ১৫-২০ টন ওজনের মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচল করছে। এছাড়া কয়লা ও ইট ভর্তি ট্রাক পরিবহনের সময় ওজন থাকে ২০-৩০ টনের কাছাকাছি। একই সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পাথর, ব্যবসায়ীদের রড-সিমেন্ট এবং ধান চাল পরিবহনেও মাত্রাতিরিক্ত ওজনের ট্রাক এসব সড়কে চলাচল করে থাকে। এতে করে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় নতুন পুরাতন সড়কগুলো ক্রমেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। একারনে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,- কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মীত সড়কগুলো রক্ষায় মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তব ভিত্তিক কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত মঙ্গলবার পৌরসভার চিৎলাপাড়া-হাজীর হাট সড়কে গিয়ে দেখা গেছে,- প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দের। দিনে বিরতিহীনভাবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টরগুলো চলাচল করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে ছয় মাস আগে সড়কটি কার্পেটিং করা হয়েছে। একই গারিষাপাড়া ও মধ্যমপাড়া সড়কেরও একই অবস্থা।
চিৎলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক ও আয়ুব আলীসহ কমপক্ষে দশজন অভিযোগ করেন, প্রায় সারাদিন রাস্তা দিয়ে চলে ট্রাক্টরে মাটি বহন, ট্রাকে ইট-কয়লা পরিবহন। এতে করে সড়ক হয়ে পড়ে ধুলিময়। অব্যহত এমন পরিস্থিতির ফলে জন জীবন বিষিয়ে উঠেছে। জনবহুল এলাকা হলেও এসব যানবাহনের চালকরা বেপরোয়া। ফলে কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ভয়ে চলাচল করছে।
গুরুদাসপুর পৌর সভার মেয়র মো. শাহনেওয়াজ আলী জানান, ভারী যানবাহন চলাচলে শুধু সড়কই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেনা। ধুলোর ভরে রিতিমতো নাগরিক দূর্ভোগ শুরু হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের সতর্ক করেও লাভ হচ্ছেনা।
গুরুদাসপুর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন জানান, প্রায় ২০বছর ধরে তাদের ইটভাটা চলছে। উন্নয়নের স্বার্থে সাময়িক কষ্ট মেনে নিতে হবেই ।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে গেলে ইটভাটার দরকার আছে। পাশাপাশি সড়ক তৈরির ব্যপারে সংশ্লিষ্টদের টেকসই সড়ক নির্মাণের পরামর্শ দেন তিনি।