একটি কল্পিত আলোচনা সভা
চলছে সভা উন্নয়নের, দেশ এগলো অনেক,
কার অবদান কতটুকু বলছে গন্ডা জনেক।
অধ্যাপক এক বুদ্ধিজীবী দাঁড়ান সবার আগে,
বলেন তিনি কৃতিত্বটা তাদের সিংহভাগে;
শিক্ষা জাতির ব্যাকবোন আর শিক্ষকেরাও তাই,
দক্ষ জনশক্তি গড়ায় তাদের প্রথম চাই।
দুই পা হলেই হয় না মানুষ, মানুষ গড়েন গুরু,
উন্নতিতে ক্রেডিট তাদের দিতেই হবে পুরু।
“খাদ্য হলো সবার আগে” বলেন কৃষির বাবু,
“উৎপাদনের ঘাটতিতে তাই তামাম জাতিই কাবু !
আমরা করি গবেষণা, বানাই নানান জাত,
তাইতো ফসল ফলছে এতো, পাচ্ছি মাছে ভাত।
একটু ভাবুন – খাদ্য বিনে পেট যদি রয় ফাঁকা,
কেমন করে ঘুরবে দেশের উন্নয়নের চাকা?”
এক ডাক্তার উঠে বলেন “স্বাস্থ্য সুখের মূল,
স্বাস্থ্য বিনে উন্নতি তাই ষোলো আনাই ভুল।
যে সেক্টরে যারাই থাকুন, উচিত সবার ভাবা,
মোদের সেবা উন্নতি সব কার্যক্রমের বাবা।”
প্রকৌশলী তার পালাতে উচ্চ করেন গলা,
“মোদের অবদানের কথা শেষ হবেনা বলা।
সড়ক সেতু রেলের সেবা এই যে কত শত,
সবকিছুরই মূলে পাবেন মোদের অসীম ব্রত।
কারখানা, কল, অট্টালিকা সূচক উন্নয়নের –
সব অবদান আমার মত ইন্জিনিয়ার জনের।”
এবার এলেন বিরাট পদের বিরাট প্রতিনিধি,
তাদের হাতে আইন শাসন বিচার এবং বিধি!
গর্বে বলেন বুক ফুলিয়ে “আমরা থাকলে চুপ,
তিন মিনিটে টের পেত সব ভণ্ডসাধুর রূপ,
চোর ডাকাত আর সন্ত্রাসীরা করতো শান্তি নাশ;
উন্নয়নের স্বার্থে থাকি আমরা সবার পাশ।”
প্রশাসনের কর্তা বড়, মাইক নিলেন হাতে
বললো “বলুন, প্রভাব মোদের নেই আজি কোন খাতে?
স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, শাসন সবার মাথায় বসে
উন্নয়নের হিসেব সকল আমরারা দেই কষে।
কন্ট্রোলে রই আমরা ধরে স্টিয়ারিং বা পেডেল,
পাওনা তো তাই মোদের গলেই সোনায় মোড়া মেডেল।”
সবার কথা শুনছিল দুই কৃষক শ্রমিক সেথা,
মন দিয়ে সব শুনে কেমন জাগছে বুকে ব্যথা !
ভাবছে সবাই কত কাজের, কত গুণের গুণী !
দেশের উন্নয়নে মোদের কী ভূমিকা শুনি !
অন্যরা সব আবিষ্কারে ব্যস্ত সারাবেলা,
আমরা খেলি শুধুই মিছে কাদামাটির খেলা !
জ্ঞানী-গুণীর শ্রম সাধনায় উন্নত আজ জাতি,
তারাই মোদের চন্দ্র, সুরুজ, তারাই তারার বাতি।
ধন্য মোরা তাদের কারণ এগিয়ে যাওয়ার দেশে
অন্তত তাও বাঁচতে পারি ফসল ভালোবেসে !
(নাটোরের কৃতি সন্তান ছড়াকার টিপু সুলতান বর্তমানে সরকারী আজিজুল হক সরকারী কলেজে ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং কাব্যগ্রন্থ বেদনা বিলাসের রচয়িতা।)