নাটোর অফিস॥ নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর বরমহাটি ইউনিয়নের শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ইসলাম হোসেন স্বপদে যোগদানের পরও বিদ্যালয়ে না যেতে হুমকি দিচ্ছেন নয় বছর ধরে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে থাকা এনামুল হক। গত সপ্তাহে ইসলাম হোসেনকে ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে টাকাও আদায় করেন এনামুল হক। এর আগে এনামুল হক গভীর রাতে প্রধান শিক্ষক ইসলাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে স্ত্রীক মারপিট করে এবং টাকা, গহনা ও বিভিন্ন কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ইসলাম হোসেন।
বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষককে হুমকি ও প্রাণনাশের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন শালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। মানববন্ধনকালে শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা হুমকিদাতাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান।
জানা যায়, ২০০৫ সালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের শুন্য পদে যোগদান করে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনুমোদিত ম্যানেজিং কমিটি বহাল থাকার পরও বিধি বহির্ভূতভাবে এডহক কমিটির সভাপতি ওমর আলী নিজেই আহ্বায়ক হয়ে সভা আহ্বান করে কমিটির মাত্র দুইজন সদস্যের উপস্থিতিতে ইসলাম হোসেনকে বরখাস্ত করেন এবং তার ভাই এনামুল হককে স্বপদে বসান। উচ্চ আদালতের একটি রিটের প্রেক্ষিতে কোন শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশি বরখাস্ত না রাখার নির্দেশ সত্বেও ২০১০ সাল থেকে ইসলাম হোসেনকে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধান নীতিমালা অনুযায়ী ইসলাম হোসেনকে বরখাস্ত করার জন্য আপীল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটিতে অনুমোদনই হয়নি।
বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে রসিদবিহীন মর্জিমত সেশন ফিস, আতিরিক্ত বোর্ড ফিস, চাঁদা, বিদ্যুৎবিল আদায়, জালিয়াতির মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগদান ও সনদ বাবদ মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। তার কাজের প্রতিবাদ করলে নানারকম হয়রানির খড়গ নেমে আসতো অন্যদের উপর। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফিস বাবদ আংমিকসহ সকল বিষয়েল মোট ৩১ জন পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ফিসসহ ৬৪ হাজার টাকা আদায় করলেও বোর্ড নির্ধারিত ফিস জমা দেন ৩৭ হাজার টাকা। ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটি গঠন না করে আতœীয় স্বজনদের অন্তর্ভুক্ত করে এডহক কমিটি গঠনের মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারী অংশ বিলে প্রতিস্বাক্ষর করে বেতন ভাতা উত্তোলন করে চলেছেন। সম্প্রতি এনামুল হকের দাখিলকৃত বেতন-বাতার সরকারী অংশের বিলে স্বাক্ষর না করে তার অনিয়ম ও জালিয়াতির ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড পরিদর্শক বরাবর চিঠি দিলে জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তে জানা যায়, এনামুল হক হাইকোর্টের একটি আদেশ নিজেই জালিাতির মাধ্যমে শিক্ষা অফিসে দাখিল করেন। ফলে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে এনামুল হকের বেতন-ভাতার সরকারী অংশের বিলে প্রতিস্বাক্ষর বন্ধ রাখেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
বিদ্যালয়টির প্রস্তাবিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলতাব হোসেন বলেন, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এনামুল হক এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির সম্মান নষ্ট করেছেন। এখন শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের জন্য প্রধান শিক্ষককে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। এতে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে উধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক ইসলাম হোসেন বলেন, কোন অবৈধ নিয়োগ বা কাজে সমর্থন না করায় বিতর্কিত এডহক কমিটি আমার উপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে। আইনের বিধান মতে তারা আমাকে বরখাস্ত করেনি যা প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করেছি। এখন স্বপদে ফিরলেও এনামুল হক আমাকে হুমকিসহ হত্যাচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ন্যায় বিচার পাওয়াই কি আমার অপরাধ? আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এনামুল হকের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাইমুর রহমান
নাটোর
১৩-০৩-১৯