নাটোর অফিস॥
অভাব সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে দশ বছর আগে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের নতুনবস্তী পাটকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। সঙ্গে নিয়ে যান চাচাতো ভাই রতন আলীকে। রিক্সা চালিয়ে সংসার খরচ পাঠাতেন বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তানদের জন্য।
ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকার নুরুল হকের একটি গ্যারেজ থেকে রিক্সা ভাড়া নিয়ে চকবাজার এলাকায় তারা ভাড়া খাটতেন। বেশ ভালই কাটছিল দুই ভাইয়ের। কিন্তু সাইফুলের সুখের স্বপ্ন তছনছ করে দেয় বুধবার রাতের চকবাজর এলাকার অগ্নিকান্ড। সাইফুল ওই দিন রাতে চকবাজার এলাকায় ভাড়া খাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরা হয়নি সাইফুলের। রিক্সা সহ পুড়ে অঙ্গার হয় সাইফুলের দেহ। অন্যদের মত সাইফুলও আগুনে পুড়ে মারা যায়। মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছার পর চলছে শোকের মাতম।
নিহত সাইফুল ওই গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। শুক্রবার ভোর রাতে সাইফুলের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছিলে গোটা গ্রাম জুরে শুরু হয় কান্নার রোল। এসময় গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সাইফুলকে দেখতে আসা ভিন গ্রামের মানুষও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে লাশ শনাক্ত করা হয়।
নিহত সাইফুল ইসলামের চাচাতো ভাই রতন আলী বলেন, তারা প্রায় ১০ বছর ধরে তারা চকবাজার এলাকায় রিক্সা চালান। বুধবার রাতের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তার ভাই সাইফুল ইসলাম নিখোঁজ হলে বৃহস্পতিবার শাহি মসজিদের সামনে একটি ধ্বংসস্তুপে রিক্সা দেখে সাইফুলের নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত হন। পরে রাত ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে লাশের গলায় চান্দির মালা দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে শুক্রবার ভোর রাতে নিহত সাইফুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নতুনবস্তী পাটকান্দি গ্রামে আনা হয়। পরে সকাল ১০টায় জানাজা নামায শেষে স্থানীয় কবরন্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি) মনিরুল ইসলাম নিহত সাইফুলের লাশ দাফনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এলাকায় নিহতদের পরিবারের খবর নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, বিষয়টি তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন। এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, তিনি রাষ্ট্রীয় অন্য একটি কাজে জেলা শহরের বাহিরে অবস্থান করায় জানাজা নামাযে শরীক হতে পারেনননি। তবে সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের সব ধরনের সহায়তা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ওই গ্রামে যাবেন তিনি।