নবীউর রহমান পিপলু, নাটোর॥
নাটোরের ভাষা সৈনিক ফজলুল হক এখনও রাষ্ট্রিয় কোন সম্মননা পাননি। জীবনের শেষভাগে এসে তার চাওয়া পাওয়া একটিই। তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ভাষা সৈনিক ফজলুল হকের রাষ্ট্রিয় সম্মননা পাবেন এমন দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবারের সদস্য সহ নাটোরের মানুষ।
বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়া ভাষা সৈনিক ফজলুল হক বলেন, ১৯৩৮ সালের ২৩ জুলাই নাটোর শহরের কান্দিভিটা এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ। সে সময়ে জিন্নাহ মডেল হাই স্কৃল বর্তমানের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে পড়তেন। ছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন। উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণায় সারা দেশ তখন উত্তাল। ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ছাত্র মিছিলে গুলি বর্ষণের খবরে নাটোর সহ দেশব্যাপী ছাত্ররা রাজ পথে নেমে আসে। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে তিনি সহ তার কয়েকজন সহপাঠির নেতৃত্বে তৎকালীন জিন্নাহ মডেল হাই স্কুল,গালর্স হাই স্কুল ও মহারাজা হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে রাজপথে মিছিল বের করেন। এসময় তিনি, গালর্স স্কুলের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রী সামশুন্নাহার, শাহ ফজলুল হক ও হীরক রায়ের তেৃত্বে শহরের লালবাজার,কাপুড়িয়াপট্টি এলাকা ঘুরে মিছিল শেষে নিচাবাজার এলাকায় বাবু চৌধুরী বাড়ির আঙ্গিনা আমতলায় মিটিং করা হয়। ওই মিটিং করায় পুলিশি হুলিয়া নিয়ে পালাতে হয় তাকে সহ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র ছাত্রীদের। তারা পুলিশের নজর এড়িয়ে পালিয়ে যান পিপরুল গ্রামে। সেখানে মহিউদ্দিন শেখের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তারা তিনজন সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করেন। পরে সেখান থেকে চলে আসেন নিজ নিজ বাড়িতে। চালিয়ে যেতে থাকেন ভাষা আন্দোলনের মিছিল মিটিং। এজন্য বাড়িতে মা-বাবার শাসন গর্জনও শুনতে হয়েছে। পরবর্তীতে লেখা পড়া শেষে জেলা বোর্ডের অধীনে এসও পদে সেকশনাল অফিসার) চাকুরীতে যোগদান করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি ফরিদপুর ডিষ্ট্রিক বোর্ডের অধীনে কর্মরত ছিলেন। সেসময় সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাজে সহায়তায় করেছেন। পালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন।
ফজলুল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি এখনও। এখন সময় কাটে গাছ গাছালি পরিচর্যা করে এবং তাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ে। স্বীকৃতি না পাওয়ার জন্য রয়েছে তার আক্ষেপ। জীবনের শেষ প্রান্তে তার চাওয়া পাওয়া বলতে কিছুই নেই। শুধু একটিই চাওয়া ,তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির শান্তনা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চির বিদায় নিতে চান এই ভাষা সৈনিক। পরিবারের সদস্যরাও চাইছেন তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।