আশিকুর রহমান টুটুল, লালপুর॥
এক দশ আগেও নাটোরের কৃষকদের কাছে তেমন গুরুত্ব ছিল না তুলা চাষের। সমকালীন ফসল হিসেবে গম, মসুর ও শাকসবজি চাষই ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা। তবে এখন জেলার লালপুর উপজেলার বড়াল নদী বিধৌত ৮টি এলাকার কৃষকরা তুলা চাষের দিকে ঝ্ুঁকেছেন। তুলা চাষ লাভজনক ও ফলন ভাল হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকাগুলোর অনেক দরিদ্র ও বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৬০ একর জমিতে চাষাবাদ হওয়া তুলা লালপুরের কৃষিতে খুলে দিয়েছে একটি নতুন সম্ভবনার দিগন্ত, মনে করছেন স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অর্ন্তভুক্ত দয়ারামপুর ইউনিট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় ধুপইল, ফুলবাড়ী, চংধুপইল, তারাপুর, রামাগাড়ী, আব্দুলপুর, ভবানীপুর এলাকায় ১৬০ একর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৪ হাজার মন তুলা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা উফশী সিবি-১২, সিবি-১৪, সিবি-১৫ ও হাইব্রিড রুপালি-১, রুপালি-২ ও লালতির ডিএম-৩ জাতের তুলার চাষ বেশি করেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে লালপুরের বিভিন্ন তুলা ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, সবুজ তুলা গাছে ভরে আছে বিস্তীর্ণ ক্ষেত। প্রায় প্রতিগাছেই রয়েছে কাঁচা তুলার ফল। দুই একটি গাছে ফল থেকে সাদা তুলা ফুটতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন পরই ক্ষেত থেকে তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে।
ধুপইল এলাকার তুলা চাষীরা জানান, এই অঞ্চলে আগে তেমন তুলার চাষ হয়নি। কিন্তু যে টাকা ব্যয় করে তারা স্বাভাবিক ফসল চাষ করতেন তাতে কোনরকম খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখা যেত না। বিগত কয়েক বছর থেকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দয়ারামপুর ইউনিটের সহযোগিতায় তারা তুলা চাষ করেছেন।
কেন লালপুরের কৃষকরা তুলা চাষে ঝুঁকছেন- জানতে চাইলে একাধিক কৃষক যায়, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় উৎপাদিত তুলা নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের নিকট থেকে বীজ তুলা সংগ্রহ মালিক সমিতি কুষ্ঠিয়া (জিনিং) কোম্পানী সরাসরি ক্রয়করে থাকেন। ফলে অন্যান্য ফসলের মতো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়তে হয়না তাদের।
তুলা চাষী মোস্তফা বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচে তুলার চাষ করা যায়। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তুলা চাষ করতে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, ঔষধ সরবারহ এবং তুলা উৎপাদনের সার্বক্ষণিক পরিচর্যাও করায় ফলনও ভালো হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত তুলার চাহিদা ও দাম ভাল।’
ধুপইল গ্রামের তুলা চাষী গাজী আহম্মেদ বলেন, ‘এই প্রথম আমি দেড় বিঘা জমিতে রূপালি-১২ জাতের তুলার চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও নিয়মিত পরিচর্যা করায় তুলা খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। বর্তমানে প্রতি মন তুলার দাম ২ হাজার ৫ শত টাকা। শ্রমিক ও সারের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় যদি প্রতি মন তুলার দাম ৩ হাজার টাকা করে পাওয়া যেত তবে আগামীতে এই এলাকার অধিক জমিতে তুলার চাষ হবে বলে তিনি জানান।’
তুলা চাষী রিপন বলেন, ‘আমি ৬ বিঘা জমিতে সিবি-১৫ জাতের তুলা চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। বড়াল নদীর এই এলাকায় আমার দীর্ঘদিন থেকে তুলার চাষ করে আসছি। বর্তমানে বড়াল নদীটি মরে যাওয়ার কারনে তুলা চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পানি সেচ আমরা পাম্পের মাধ্যমে দিচ্ছি এতে একটু খরচ বেশি হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগষ্ট মাসে জমিতে তুলার বীজ বপন করা হয় এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে জমি থেকে তুলা সংগ্রহ শুরু হয়। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমি থেকে ১২-১৬ মন তুলা উৎপাদন হয়। যা বিক্রয় করে খরচ বাদ দিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তুলার দাম একটু বৃদ্ধি করলে এই এলাকায় তুলা চাষে বিপ্লব ঘটবে।’
রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দয়ারামপুর ইউনিটের বীজ তুলা সংগ্রহ ও জিনিং অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, লালপুরে তুলার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে লালপুরে ১৬০ একর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে প্রায় ৭-৮ হাজার মন তুলা উৎপাদন হবে। কেউ তুলা চাষে আগ্রহী হলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।’