নাটোর অফিস: নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুর্গম দামকুড়ি গ্রামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য ১৯৯০ সালে কয়েকজন দাতার দেওয়া জমিতে গড়ে তোলা হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু বিদ্যালয়টি চালু অবস্থায় ২০০১ সালে রাতারাতি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে পরিবাবার পরিজনসহ বসবাস করছেন ওবায়দুর মোল্লা নামে এক ব্যক্তি। ফলে প্রায় ১৭ বছর ধরে স্থানীয় একটি মাদরাসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
আইনী জটিলতার কারনে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের পরও তা দখলমুক্ত করা যাচ্ছেনা বলে জানান এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে গ্রামের জনহিতৈষী ব্যক্তি মরহুম হারান মোল্লা ২০ শতক এবং তার ভাই ভাতিজাসহ আরো পাঁচ জন অবশিষ্ট ১৩ শতক জমি দান করেন একটি স্কুল নির্মাণের জন্য। দান করা ওই ৩৩ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা হয় দামকুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে পাকা ভবন নির্মাণ করা হলে প্রাণের সঞ্চার হয় এলাকার অভিভাবকদের মাঝে। কিন্তু হঠাৎ করেই হারান মোল্লার ছেলে ওবায়দুর মোল্লা বাবার দানকৃত সম্পত্তি নিজের দাবী করে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় ২০০১ সালের দিকে হারান মোল্লা মারা যান। পরবর্তীতে ২০১০ সালের দিকে রাতের অন্ধকারে বিদ্যালয় ভবনের তালা ভেঙ্গে পরিবার পরিজন সহ বিদ্যালয় ভবনটি দখলে নেন ওবায়দুর মোল্লা।
স্থানীয়রা জানায়, দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রাণনাশে আশংকায় কোন প্রতিরোধ করেননি। তারা আইনের আশ্রয় নেন। আদালত হারান মোল্লার দায়ের করা মামলায় সরকারের পক্ষে রায় দেয় আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ওবায়দুর মোল্লা পুনরায় মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ফলে আইনি জটিলতার কারনে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে ওই স্কুল ভবনটি অবৈধ দখলে রেখেছেন প্রভাবশালী ওহিদুর মোল্লা। প্রভাবশালী ওহিদুর মোল্লার হুমকিরে মুখে শিক্ষকরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জোরপূর্বক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে বসতভিটা নির্মাণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মহসিন সরদার, জিয়ারুল ইসলাম, মতিজান, রোজিনাসহ অনেকে জানান, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর তারা ক্লাস করেছেন। সরকার থেকে ভবন করে দিয়েছিলো। ভবন এখনো রয়েছে। কিন্তু ভবনটি বেদখল থাকায় ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। সেখানে ওবায়দুর নামের এক পরিবার বসতভিটা হিসেবে বসবাস করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক জানান, স্কুলটি গ্রামের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। কারণ এই দূর্গম এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূর দূরান্তে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। দূর্গম এলাকা বিধায় অনেক কষ্টে তারা পড়ালেখা করে আসছে। স্কুলটি যথারীতি চলমান অবস্থায় ২০১০ সালে হারানের ছেলে ওবায়দুর স্কুলটি দখল করে বসবাস শুরু করে।
এলাকাবাসী জানায়, ওবায়দুরের দুই ছেলে বড় হওয়ায় তাঁর লাঠির জোর বেড়ে যায়। এছাড়া কিছু কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় স্কুল দখল করে বসবাস শুরু করে আসছে তারা। কারো কোন বাধা-নিষেধ শুনেনি। কেউ নিষেধ করলে তাকে মারতে উদ্যত হয়।
স্কুলের শিক্ষিকা শিউলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে স্কুলটি পরিচালনা হয়ে আসছে। সম্প্রতি স্কুলের দাতার ছেলে জোরপূর্বক দখল করায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরা স্থানীয় মসজিদের এবতেদায়ী শাখায় ক্লাস করছে। এমন পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ অন্যত্র ক্লাস করছে। ভয়ে স্কুলে আসতে পারে না। গতবার ৫ম শ্রেনীর সমাপনি পরীক্ষায় ৫জন পাশ করে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ জানান, গ্রামবাসী স্কুলটি চালুর দাবী দীর্ঘদিনের । কিন্তু একটি মহল স্কুলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পায়তারা করছে। স্কুলের বিষয়ে হারান মোল্লার মামলায় সরকার ডিগ্রি পায়। পরে হারানের ছেলে ওবায়দুর পুনরায় মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
স্কুল দখলকারী ওবায়দুর মোল্লা স্কুলের জায়গা নিজের জায়গা দাবি করে বলেন, মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে, আমার ছেলে লেখাপড়া করছে, তাকে যদি স্কুলে চাকুরি দেয়া হয় তাহলে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে জোর দিয়ে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মঈনুল হাসান জানান, স্কুলের ভবন দখল হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম নাই। গতবারও বই দেয়া হয়েছিলো।