বাগাতিপাড়া: কালের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যাত্রাপালা হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র উদ্যোগে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় একটি করে ৬৪টি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি এরই অংশ হিসেবে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দয়ারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চস্থ হয় ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ বিখ্যাত যাত্রাপালা। স্থানীয় শিল্পীরা এতে অংশ নেন। দর্শক উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
পৌরাণিক যাত্রাপালা ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ পরিবেশন করে নাটোরের জনপ্রিয় নাট্য সংগঠণ ‘চলন নাটুয়া’। আয়োজকরা বলেন, যাত্রাটির পালাকার ছিলেন কালিপদ দাস, পুনর্বিন্যাস ও নির্দেশনা করেন ফারুক হোসেন এবং নির্দেশনা সহকারী ছিলেন সুজিত ঠাকুর। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক হোসেন, সুজিত ঠাকুর, লালন, জয়নাল আবেদীন, সাদেক হোসেন, দুলাল, শহিদুল ইসলাম, দিয়া মনি, বজলু মোল্লা, আলী আহম্মেদ, নজরুল ইসলামসহ ১১ জন স্থানীয় শিল্পী।
দর্শকদের সাথে উপস্থিত থেকে যাত্রাপালা উপভোগ করেন জেলা কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেন, ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ পিপিএম, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ইলামিত্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী মসগুল হোসেন ইতি প্রমুখ।
নির্দেশক ফারুক হোসেন বলেন, পৌরাণিক যাত্রাপালা রাজা হরিশচন্দ্র এর কাহিনী দর্শকদের মন কাড়ে। অযোদ্ধার রাজা হরিশ চন্দ্র সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তপোবনে ঋষি বিশ্বামিত্রের ত্রিবিদ্যাযজ্ঞে বিঘ্ন ঘটানোর দায়ে রাজা হরিশচন্দ্রকে ক্ষতিপূরণবাবদ বিশ্বামিত্রকে রাজ্য দান করতে হয়। স্ত্রী শৈব্যা পুত্র রোহিতাশ্বকে নিয়ে একবস্ত্রে রাজ্য ছেড়ে কাশিবাসী হন। এরপর ঋষি বিশ্বামিত্র দানের দক্ষিণা চাইলে রাজা তাঁর স্ত্রীকে সাধারণ ব্রাহ্মণের কাছে এবং নিজেকে চ-ালের নিকট বিক্রি করে ঋষির ঋণ পরিশোধ করেন। ওই ব্রাহ্মণের গৃহে রাণী শৈব্যা ও পুত্র রোহিত লাঞ্জনা-গঞ্জনা সহ্য করে জীবন ধারণ করতে থাকে। একদা রাজকুমার রোহিত সাপের দংশনে প্রাণ হারায়। মৃত পুত্রকে নিয়ে রাণী শৈব্যা চ-ালের কাজ করা রাজা হরিশ্চন্দ্রের শ্মশানে নিয়ে যান। সেখানে পুত্রকে চিতায় তুলতেই ঋষি বিশ্বামিত্র হাজির হয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ঋষিত্ববলে মৃত রোহিতের জীবনদান করেন এবং হরিশ চন্দ্রকে রাজ্যপাট বুঝিয়ে দেন। দানের মহিমায় উদ্ভাসিত হরিশ্চন্দ্র পুনরায় রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন।