নাটোর: নাটোরের দু’টি চিনিকল নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস ও নাটোর চিনিকলে আখ সরবরাহ করেও টাকা না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আখ চাষীরা। প্রায় দু’মাস আগে চিনিকলে আখ সরবরাহ করেছেন তারা। অথচ দুমাসে সেই আখের মূল্য পাননি আখ চাষীরা। এ দু’টি চিনিকলে চাষীদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা। এদিকে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ আখচাষীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধের দাবী সহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে চাষীরা।
আখ চাষীসহ সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, নাটোর চিনিকল ও নর্থবেঙ্গল সুগার মিল এলাকায় স্থানীয় আখচাষীদের কাছে থেকে আখ ক্রয় করা হয়। নাটোর সুগার মিলের ৮টি সাবজোনের মোট ৪৭ টি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার আখচাষী তাদের আখ বিক্রি করেন। অপরদিকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে ৭টি সাবজোন এর মাধ্যমে ৩৭টি কেন্দ্রে এবং মিলগেটে আখ ক্রয় করা হয়। এসব কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার আখচাষী তাদের আখ বিক্রি করেন। চাষীরা মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে পূর্জি ( আখ সরবরাহের পত্র) পান। এ পূর্জি মোতাবেক চাষীরা আখ সরবরাহ করেন। তাদের আখ বিক্রির অর্থ বর্তমানে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সর্বশেষ আখ বিক্রির টাকা পেলেও আর কোন টাকা পাননি চাষীরা। ফলে টাকার অভাবে অনেক চাষী তাদের চৈতালী আবাদ করতে পারছেন না। নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে সরবরাহকারী আখচাষীদের প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা এবং নাটোর সুগার মিলে প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়।
বাগাতিপাড়া উপজেলার পেড়াবাড়িয়া এলাকার আখচাষী আশরাফুজ্জামান মাসুম বলেন, তিনি নাটোর সুগার মিলের অধীনে মালঞ্চি আখ ক্রয় কেন্দ্রে চলতি মওসুমে এক লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। তিনি মাসাধিককাল আগে মাত্র ১২ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এরপর মিলের কাছে তার অবশিষ্ট বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। টাকা না পেয়ে বোরো মৌসুওেমর আবাদ করতে পারছেন না। সোনাপাতিল এলাকার আখচাষী রুহুল আমিন বলেন, তিনি বাগাতিপাড়া আখ ক্রয় কেন্দ্রে এক লাখ টাকার টাকার আখ বিক্রি করেও টাকা পাচ্ছেন না।
এদিকে তমালতলা আখ ক্রয় কেন্দ্রের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, তার কেন্দ্রের প্রায় ২৮৫ জন আখচাষী দেড় মাস ধরে আখ বিক্রির টাকা পাননি। এ বিষয়ে তিনি মিলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন, বর্তমানে টাকার যোগান নাই। টাকার ব্যবস্থা হওয়ার সাথে সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাষীদের আখের মূল্য পরিশোধ করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আখ ক্রয় কেন্দ্রের এক জন কর্মকর্তা জানান, আখ ক্রয় কেন্দ্রের পূর্জি অনুয়ায়ী সিআইসি আখ ক্রয় করেছেন। সে মোতাবেক বিলও দিয়েছেন। টাকা পরিশোধ করবেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলার ক্ষুব্ধ আখচাষীরা মঙ্গলবার মালঞ্চি বাজারে এক মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। মানববন্ধনে হাবিবুর রহমান হবি, আশরাফুজ্জামান মাসুম, আমিন বিশ্বাস, মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু প্রমুখ আখচাষী বক্তৃতা করেন। তারা পুর্জি বিড়ম্বনা, ওজনে কারচুপি, সরকারী ভর্তুকী প্রদানে অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তা নিরসন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আখ বিক্রির অর্থ পরিশোধের দাবি জানান।
নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদ উল্লাহ বলেন, চাষীদের আখ বিক্রির টাকা না পাওয়ার দাবি যৌক্তিক। চিনিকলের উৎপাদিত চিনি সরকারের বর্তমান নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। সেকারনে চাষীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। চিনি বিক্রি করে ও সরকারের সহযোগিতায় আর্থিক সংকুলানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থের যোগান হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাষীদের টাকা পরিশোধ করা হবে। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, তার চিনিকলের অধীনে আখ ক্রয় বাবদ প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। চাষীদের এই বকেয়া অর্থ দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার চেষ্টা চলছে।