নাটোর: এক মাস আগেও তারা দলের সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। সংসদ নির্বাচন শেষে উপজেলা নির্বাচনের তোরজোড় শুরু হতেই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। অবস্থান নিয়েছেন একে অপরের বিপরীত। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দলের এই দুই শীর্ষ নেতা ।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পোস্টারিং করেছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের পোস্টারে ঢেকে গেছে দেয়াল। সব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছাপিয়ে গেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার মনোনয়ন যুদ্ধ। তারা হলেন বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান। ভোটের আগেই তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে লিপ্ত হয়েছেন। সংসদ নির্বাচনের পর নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একে অপরের পোস্টারের উপর পোস্টার সেঁটেছেন এই দুই নেতা। এছাড়া একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিলবোর্ড ভাংচুরের অভিযোগও করেছেন। এসব ঘটনায় এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের দাবী, ভোটের আগেই তারা অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন।
সম্প্রতি উপজেলার যোগীপাড়া, বিহারকোল, তমালতলা বাজার, পেরাবাড়িয়া, দয়ারামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে চেয়ারম্যান পদে দোয়া চেয়ে তারা পোস্টারিং করেছেন। তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, সভাপতি আবুল হোসেনের পোস্টারের উপর সাঁটানো হয়েছে সম্পাদক সেকেন্দার রহমানের পোস্টার। আবার সম্পাদক সেকেন্দার রহমানের পোস্টারের উপর সাঁটানো হয়েছে সভাপতি আবুল হোসেনের পোস্টার।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেনের অভিযোগ, উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান তার পোস্টারের উপর পোস্টার সেঁটেছেন। একইসাথে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁটানো তার পোস্টারগুলো ছিড়ে ফেলেছে সেকেন্দার রহমানের কর্মী-সমর্থকরা।
একই অভিযোগ সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমানের। তিনি জানান, প্রথমে সভাপতি আবুল হোসেনের লোকজনই পোস্টার ছেঁড়া শুরু করেছেন। এমনকি আবুল হোসেনের বাড়ির সামনে লাগানো তার বিলবোর্ডও কেটে ফেলেছে আবুলের সমর্থকরা।
একজনের পোস্টারের উপর আরেকজনের পোস্টার সাঁটানোর ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করেছেন দলের এই দুই প্রবীন নেতা। বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগকালে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগও করছেন। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পড়েছেন বিভ্রান্তিতে। হয়ে পড়েছেন দ্বিধাবিভক্ত ।
উপজেলার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার দাবী, সিনিয়র দুই নেতা ভোটের আগেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগে দুই মেরুতে অবস্থান নেয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন সাধারণ কর্মীরা। আবুল হোসেন প্রায় একযুগ ধরে সভাপতি এবং সেকেন্দার রহমান প্রায় আড়াইযুগ ধরে দলের হাল ধরে রেখেছেন বাগাতিপাড়ায়। তারা ব্যক্তিস্বার্থে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে দলের ক্ষতি করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তাই ভীত হয়েই এই কাজ করছেন সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকরা। তবে এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ করবো না দলের কাছে। বিচার জনগনকে দিচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান বলেন, ‘আমার পোস্টার ছিড়ে তার উপর সভাপতির পোস্টার সাঁটানো শোভনীয় হয়নি। সভাপতি সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এসব করছেন। এসব করে জনগণের সহানুভূতি পাওয়া যাবে না।’
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু বলেন, ‘আবুল হোসেন ও সেকেন্দার রহমান দুজনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং দলের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁরা দুজনায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। দীর্ঘদিন ধরে তারা বাগাতিপাড়া উপজেলায় দলের হাল ধরে আছেন। তাদের ভেতরে নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্ত তা প্রকাশ্য বিরোধ পর্যায়ে যাবে এমনটা কাম্য নয়। আশা করি দুজনেই দলের বৃহত্তর স্বার্থে সংযত হবেন।’