নাটোর: কবর খোড়া হয়েছে। তবে মরদেহ দাফনের জন্য নয়। মুখ বেঁধে কবরে শুইয়ে দেয়া হয়েছে জীবন্ত একজন মানুষকে। দাফনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে রীতিমতো মাটিচাপা দেয়াও হয়েছে। এইবার দেখানো হবে যাদু, দেখাবেন এক যাদুকর। উৎসুক জনতার চোখ তখন কবরের দিকে। হঠাৎ পাল্টে গেল জাদুকরের সুর। উপস্থিত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে জাদুকর বললেন, ‘যা আছে আনুন, নইলে বাঁচানো যাবে না ভেতরের মানুষকে। মানুষটি মরে গেলে এই এলাকার কেউই বাঁচবে না।’
যাদুকরের মুখে ভয়ঙ্কর এমন কথা শুনে আশেপাশের মানুষরা হন্তদন্ত হয়ে আনা শুরু করলেন যার কাছে যা আছে। কেউ নগদ টাকা, কেউ ধান, কেউ কাপড় এনে ওই কবরের সামনে রাখা শুরু করলেন। ঠিক এমন সময় পাশ দিয়ে ফোর্সসহ যাচ্ছিলেন বাগাতিপাড়া থানার এসআই খাইরুল ইসলাম। মানুষের ভীড় ঠেলে কাছে গিয়ে দেখেন মৃত্যুর অভিনয় করিয়ে অভিনব কৌশলে করা হচ্ছে প্রতারণা।
মঙ্গলবার(২২শে জানুয়ারী) বিকেলে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের রহিমানপুরে বাদশা নামক জনৈক ব্যক্তির বাড়ির সামনে অদ্ভুত এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কথিত জাদুকর পরিচয়ের ৩ প্রতারককে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামের মৃত মোসলেম দারোগার ছেলে মনোয়ার হোসেন(৩৩),একই গ্রামের মৃত পিয়ার আলীর ছেলে পলাশ(২৯) ও ঝিনাগ্রামের মাসুদ আলীর ছেলে সেলিম হোসেন(৩২)। আটক ৩ জনই বাঘা থানার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে বাঘা থানায় পলাশের বিরুদ্ধে ৫টি ও মনোয়ারের বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা রয়েছে।
বাগাতিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম জাগো নাটোরকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে রহিমানপুর থেকে ফেরার সময় বাদশা নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে জনতার ভীড় দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি সেলিমকে কবরে শুইয়ে রেখে মাটি চাপা দিয়েছে মনোয়ার ও পলাশ। কথামতো সাহায্য না করলে সেলিমের মৃত্যু হবে এবং সেলিমের মৃত্যু এলাকবাসীর জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে বলে তারা উপস্থিতি জনতাকে জিম্মি করে টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছিলো। পুলিশ এসময় কবর থেকে জীবন্ত সেলিমকে উদ্ধার করে সুস্থ করে এবং প্রতারণার অভিযোগে থানায় নিয়ে আসে।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখ পিপিএম জানান, আটককৃত ৩ জনই পাশ্ববর্তী বাঘা থানার তালিভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক মামলার আসামী। কি কারণে তারা এমন অদ্ভুত প্রতারণা চালাচ্ছিল তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।