বাগাতিপাড়া: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি-নাটোর ও আব্দুলপুর-রাজশাহী রুটের রেলপথে ১০টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯ টিতেই কোন গেটম্যান নেই। ফলে উপজেলার ইয়াছিনপুর, স্বরূপপুর, ঠেঙ্গামারা, বড়পুকুরিয়া, মাড়িয়া নিংটিপাড়া, মাড়িয়া, হাড়ডাঙ্গী, মালিগাছা ও গাঁওপাড়া রেলগেটের সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওইসব রেলগেটে একদিকে যেমন গেটম্যান নেই, তেমনি রাখা হয়নি কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাও। ফলে ওইসব উন্মুক্ত রেলগেট দিয়ে যানবাহন এবং মানুষজন চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানীও।
জানা গেছে, উপজেলার সীমানার মধ্যে মালঞ্চি ও লোকমানপুর নামের দুটি রেল স্টেশন রয়েছে। উপজেলার মাঝ বরাবর আব্দুলপুর হতে পার্বতীপুর অভিমুখে মালঞ্চি রেল স্টেশন এবং আব্দুলপুর হতে রাজশাহী অভিমুখে রয়েছে লোকমানপুর রেল স্টেশন। মালঞ্চি স্টেশনের দুই পাশে রয়েছে ৫টি রেল ক্রসিং। এর মধ্যে মালঞ্চি রেলগেট ছাড়া কোনটিতেই গেটম্যান নেই। আর লোকমানপুর স্টেশনের দুই পাশের ৫টি রেল ক্রসিংয়ের সবগুলোই অরক্ষিত।
ওই সব রেলগেট ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহন এবং লোকজন ওইসব পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সাধারণ পথচারী ছাড়াও ওইসব পথের বেশ কয়েকটি দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করে। মোট দশটির মধ্যে মালঞ্চি রেলগেটে রয়েছে অনুমোদিত গেটম্যান। আর বাঁকি সব রেলগেটগুলো উন্মুক্ত।
রেলগেট সংলগ্ন এলাকাবাসীরা জানান, বছর চারেক পূর্বে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় ভুটভুটির দুর্ঘটনায় নববধুসহ ৩ জন নিহত হয়। বড় পুকুরিয়া রেলগেটে পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিন বছর আগে মৃত আতাহার আলী সরকারের ছেলে রাজ্জাক আলী সরকার নামের একজন নিহত হন। মাড়িয়া নিংটিপাড়া রেলগেটে চিথলিয়া গ্রামের ফজিলা নামের এক গৃহবধু কাটা পড়েন। মাড়িয়া রেলগেটে গরু নিয়ে পারাপারের সময় ধাক্কায় মকছেদ নামের এক কৃষকসহ ওই রেলগেটে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রায় সাত জন নিহত হয়েছে।
হাড়ডাঙ্গী রেলগেট সংলগ্ন চা দোকানদার জমসেদ জানান, বছর খানেক পূর্বে তার চোখের সামনে পারাপারের সময় এক ট্রলি চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা খায়। তাতে থাকা চালকসহ অন্যরা ছিটকে পড়েন। এে আব্দুল খালেক সরকার নামের একজন মারা যান। তাছাড়াও ওই গেটে প্রায় প্রতিবছরই যানবাহনসহ পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন।
এছাড়াও এসব রেলগেট পারাপারের সময় নসিমন, খাবারের গাড়ি, সাংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যান রেলের ধাক্কা খেয়েও বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়ার তথ্য মিলেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, গুরুত্বপূর্ণ এসব রেলগেটে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে।
অটো চালক আজিজুর রহমান জানান, রাতে ট্রেনের আলো দেখে ওইসব রেলগেটের ওপর দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হয়। কিন্তু দিনে ট্রেন আসছে কিনা তা বোঝা যায় না। ফলে রেলগেটে গাড়ি থামিয়ে দু’পাশ দেখে পারাপার হতে হয়। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি।
নাটোর রেলস্টশনের স্টেশন মাস্টার অশোক চক্রবর্তী জানান, গ্রামীণ রাস্তাগুলো বাড়ার কারণে রেলক্রসিং বেড়েছে। তবুও রেলের রেকর্ডের বাইরে ক্রসিং থাকলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।