নাটোর অফিস।।
নাটোরের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রথম মন্ত্রী ও কৃতি সন্তান জননেতা ফজলুর রহমান পটল চিরদিন বেঁচে থাকবেন জনগণের হৃদয়ে মাঝে । আজ ২৪ এপ্রিল ছিল ক্ষণজন্মা এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অনন্য সংগঠক ও দেশের কীর্তিমান রাজনীতিক নাটোর জেলার প্রথম মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল এর ৭৬ তম জন্মবার্ষিকী। ফজলুর রহমান পটল ১৯৪৯ সালে ২৪ এপ্রিল নাটোরের লালপুর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলমি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।
ফজলুর রহমান পটল স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত একটি নাম। এমনই একজন ব্যক্তিত্ব যিনি দেশ ও জাতিকে নানাভাবে ধন্য করে গেছেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশ ও মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় তিনি মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন।
একজন অনলবর্ষী বক্তা এবং জনগণের প্রকৃত সেবক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তাঁর বাবার নাম মরহুম আরশাদ আলী এবং মাতার নাম মরহুম ফজিলাতুন নেছা। ৫ভাই ও১ বোনের পরিবারে তিনিই ছিলেন সবার বড়।গৌরিপুরে প্রাথমিক ও গৌরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে পাবনাতে গিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন।
সেখানে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যামিক পাস করেন। এর পর তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি পরিসংখ্যান বিষয়ে পড়াশুনা করেন।। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
তবে রাজনৈতি উত্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৭৩ সালে ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে আওয়ামী ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন
১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ফজলুর রহমান পটল নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১-১৯৯৩ পর্যন্ত যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, ১৯৯৩-১৯৯৬ পর্যন্ত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১-০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বিএনপির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপষ্ঠো হিসাবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসাবে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি মন্ত্রী এবং এমপি থাকা কালে নাটোর জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেন। পারিবারিক জীবন প্রায় ৪২ বছর আগে ১৪ মে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইন্সটিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। বড় ছেলে ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন। পেশায় একজন চিকিৎসক। রাজন ২০০৪-০৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন ও তার বাবার মৃত্যুর পরে লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও বর্তমানে নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য, ছোট ছেলে ইস্তেখার আরশাদ প্রতীক বর্তমানে ইউনিলিভার লিমিটেডের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত আছেন। বড় মেয়ে ফারহানা শারমিন কাকন গৃহীনি। ছোট মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী ও রাজনৈতিবিদ । তিনি বর্তমানে বিএনপি’র মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য ও নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জননেতা পটল জীবনের শেষ সময়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন। তিনি দেশে বিদেশে চিকৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। সেখানে রবীন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৬ সালের ১১ আগষ্ট দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বড় ডাঃ রাজন, ছোট মেয়ে এ্যাড. ফারজানা শারমিন পুতুল ও স্বামীর শূন্যতা পূরণে অধ্যক্ষ (অব:) কামরুন্নাহার শিরিন নাটোরের মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিএনপিতে যোগদান করার পর থেকে আমৃত্যু দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তার জীবদ্দশায় দেশ ও দলের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। বিএনপির বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রকে দৃঢ়চিত্তে মোকাবিলা করতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা দলের সব নেতাকর্মীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সৃষ্টিকর্তা মরহুম ফজলুর রহমান পটল কে জান্নাত নসিব করুন ।